“I hope that someday the practice of producing cowpox in human beings will spread over the world when that day comes, there will be no more smallpox.”
গোধূলির আবছায়া শাড়ির আঁচলে ছেয়ে গেছে সারাটি বিকেল। সূর্য আকাশ থেকে অবকাশ যাপনের পথ খুঁজে বেরোচ্ছে। সাথে যুবক ছেলেটিও। শীতের মৌসুম। ঠাণ্ডার তীব্রতায় স্থবির হয়ে পড়েছে চারপাশ। পথে ঘাটে নেই মানুষের চলাচল। রাতের সাথে সাথে শীতের তীব্রতাও যেন ক্রমশ বেড়েই চলেছে। নীড় হারা ধবল বকের মত উদগ্রীব হয়ে পা চালাচ্ছে বাড়িফেরত মানুষগুলো। তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলছে সেই তরুণ যুবক ছেলেটিও। বয়সের বিয়োগ ও জীবনের ভাগের হিসেবে তরুণ হলে-ও চিকিৎসক হিসেবে শহরজুড়ে রয়েছে তার ব্যাপক পরিচিতি। তাই ইংল্যান্ডের আধো শহর বার্কলেতে বসবাস করলে-ও দূর দূরান্ত থেকে রোগীদের ভিড় লেগেই থাকত তাঁর কাছে। তবে আজকে একটুখানি বাইরে বের হতে হয়েছে তাকে। দূরের এক রোগীকে দেখতে গিয়েই বাড়ি ফিরতে হয়ে গেলো অনেক রাত। কিন্তু তাতে আক্ষেপ নেই তাঁর। তাঁর কাছে দায়িত্ব এবং মানবসেবার চেয়ে বড় কিছু নেই। ক্লান্ত পরিশ্রান্ত শরীরে ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামতেই দেখলেন বাড়ির গেইটের সামনে দাড়িয়ে আছে কালো পোশাকে ঢাকা এক ভদ্র মহিলা। মহিলার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ। তড়িঘড়ি করে সামনে এগুতেই মহিলাটি তাঁর পায়ের কাছে বসে পড়ল। কাতর কণ্ঠে বলতে লাগল, “আমার ছেলেকে বাঁচান সাহেব। এই দুঃখীনি মায়ের অন্ধের যষ্টি মানিকটাকে বাঁচান ডাক্তার সাহেব।” যুবক ছেলেটি মহিলাকে তুলে বললেন, “কোথায় আপনার ছেলে?” “ওকে বাড়িতে রেখে এসেছি ডাক্তার সাহেব। অপয়মন্ত এই আমার চারটা ছেলে আগে মারা গিয়েছে। ও-ই আমার শেষ সম্বল। ওকে বাঁচান ডাক্তার সাহেব।” সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোগী দেখে পরিশ্রান্ত সেই তরুণ ছেলেটি হার মানলেন মহিলার আকুতিভরা কান্নার কাছে। শরীরে অবসাদের হাতুড়ির অভিঘাত উপেক্ষা করেই বাড়ি চলে গেলেন তার সাথে। হাঁটতে লাগলেন অন্ধকার পথ ধরে। গলির শেষভাগে ছোট্ট একটা ঘর, কোনরকমে প্রদীপ তার জীবনের শেষ আলোক টুকুন প্রতিফলিত করে যাচ্ছে সেই ঘরে। তার কোণে বিছানার উপর শুয়েছিল ছোট্ট একটি বাচ্চা। সাড়া শরীর কাপড়ে আবৃত। তরুণ ছেলেটি গায়ের ঢাকা খুলতেই শিহরিত হয়ে উঠলেন। শিশুটির শরীর জুড়ে গুটি বসন্তের অনিয়ন্ত্রিত বসবাস। গুটি বসন্তে ভরে গিয়েছে সমস্ত শরীর, সাথে প্রচন্ড রকমের জ্বর। মনে হচ্ছে যেন, জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে শরীরের জীবন্ত সকল কোষ। ঔষধের বাক্স নিয়ে শিশুটির শিয়রে জেগে রইলেন সারাটি রাত। পাশে উৎকণ্ঠা ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বুকে তার খেউড়ের মত করে লেন্টে আছে ভয়, মুখে তার একটিই কথা। আমার ছেলেকে বাঁচান সাহেব, আমার ছেলেকে বাঁচান। তরুণ ছেলেটিও হার মেনে নেবার নয়। পারতে তাকে হবেই। মিথ অব সিসিফাসের নায়কের মত পরাভবকে স্বীকার করতে চায় না সে। শুরু হলো তাঁর সাধনা। নিরবে নিভৃতে চলতে লাগলো তার গবেষণার কাজ। একদিন সুদিন নয় দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর চলতে লাগলো তার সাধনা। নেই ক্লান্তি কিংবা অবসাদের ভয়, চিতে তার সাফল্যের নেশা, লক্ষ্য তার জয়। সিসিফাসের মত যার সাধনা ও অধ্যবসায় সেই মানুষ কি কখনো হারতে পারে? অবশেষে সফলতার সূর্য সে ছিনিয়েই আনলেন। আর সেই সূর্যে আলোকিত হয়ে উঠলো জরাগ্রস্ত পৃথিবীলোক। জয়ী হয়ে গেলো মানুষের সাধনা, অধ্যবসায় ও পরিশ্রম। গুটি বসন্তের ভয়াবহ মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেলো পৃথিবী। সেই মানুষটির নিরলস সাধনায় পরাজিত হলো ভয়াবহ এই ব্যাধি। মেডিক্যাল সাইন্সে তার অবদান এতটাই সুদুরপ্রসারি যে তাঁকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের বরপুত্র বললেও অত্যুক্তি হবে না। তাঁর কাজ সম্পর্কে বলা হয়, “saved more lives than the work of any other human” এবং তাঁকে ইমিউনলজি বা রোগ-প্রতিরোধ বিদ্যার জনকও বলা হয়ে থাকে। ১৭ই মে, ১৭৪৯ সালে ইংল্যান্ডের গৌচেস্টারশায়ারের বার্কলেতে পিতা মাতার কোল আলোকিত করে মেদিনীর বুকে পদার্পণ করে সেই ছেলেটি। ছিলেন পিতা-মাতার নয় সন্তানের মধ্যে অষ্টম। জন্মের পর পিতা রেভারেন্ড স্টিজন জেনার ছেলের নাম রাখলেন এডওয়ার্ড জেনার। কে জানতো সেই ছেলেটিই একদিন হয়ে উঠবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের বরপুত্র, যিনি হয়ে উঠবেন গুটিবসন্ত রোগের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পথিকৃৎ, যেটি হবে পৃথিবীর প্রথম ভ্যাকসিন। জেনারের বাধা ছিলেন স্থানীয় ধর্মযাজক। বার্কলের জনগণের খুব প্রিয় পাত্র-ও ছিলেন তিনি। ধর্ম প্রচারের পাশাপাশি স্থানীয় মানুষের সুখে-দুঃখে তিনি ছিলেন তাদের অকৃত্রিম বন্ধু। দুঃখী মানুষের প্রতি ছিল তার অমিত ভালোবাসা। গিতার সংস্পর্শে থেকে এই চরিত্রের প্রতিফলন ঘটতে থাকে শিশু জেনারের মধ্যেও। কিন্তু পিতার সান্নিধা বেশিদিন গাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি তার। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে পিতাকে হারিয়ে তার ধর্মযাজক এক বড় ভাইয়ের স্নেহ ছায়াতেই বড় হতে লাগলেন জেনার। শৈশবে জেনার ভর্তি হোম ক্যাখারিনের উটন আন্ডার এ শহরের বার্কলেজ স্কুলে এবং পরিবর্তীকালে অধ্যয়ন করেন সাইরেন্সেস্টার স্কুলে। সাইরেন্সেস্টার স্কুলে পড়ার সময় তিনি আক্রান্ত হয় গুটি বসন্তে এবং তাঁকে ভ্যারিওলেশন করা হয় যা তার স্বাস্থ্যে চমৎকারী প্রভাব ফেলেছিল। জেনার যেখানে থাকতেন সেই বার্কলেতে ছিল না কোন প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার। ১৪ বছর বয়সে তাকে শিক্ষানবিশ হিসেবে সার্জন ড্যানিয়েল লুডলর কাছে পাঠানো হয়, যেখানে তিনি নিজে সার্জন হিসেবে প্রয়োজনীয় সমস্ত শিক্ষা এবং অভিজ্ঞতা লাভ করেন। এরপর জেনার চলে আসন লন্ডনে। সে সময় লন্ডনের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও প্রসিদ্ধ চিকিৎসক ছিলেন জন হান্টার। তাঁর কাছেই ছাত্র হিসেবে ভর্তি হলেন জেনার। অল্পদিনের মধ্যেই জেনারের মেধা, অধ্যবসায় ও নিষ্ঠায় বিমুগ্ধ হয়ে গেলেন হান্টার। দীর্ঘ ছয় বছর। হান্টারের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ শেষে ১৭৭৩ সালে ২৪ বছর বয়সে চিকিৎসক হিসেবে জেনার ফিরে এলেন তার জন্মভূমি বার্কলেতে। চিকিৎসক হিসেবে একদিকে জেনার ছিলেন যেমন মেধাবী, তেমনি রোগীদের প্রতি ছিল তার আন্তরিক মমত্ববোধ অল্পদিনের মধ্যেই চিকিৎসক হিসেবে সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়লো তার। সেই সময় মরণব্যাধি বসন্তের কালো হাতে জর্জরিত জনজীবন। তখন ইংল্যান্ডের জনসংখ্যার ১০% গুটিবসন্তে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছিল, যে সংখ্যাটা শুধু শহরেই ছিল ২০% পর্যন্ত বেশি, সংক্রমণ সহজেই হওয়া ছিল যার প্রধান কারণ। ছিল না এর কোন প্রতিষেধক কিংবা চিকিৎসা। কিভাবে মুক্তি পাওয়া যায় সেই রোগ থেকে সে সমন্ধে ছিল না কারো ধারণা। শুধুমাত্র ছিল কিছু প্রচলিত ধারণা ও বিশ্বাস। যারা গরুর দুধ দোহন করত তাদের নাকি একবার গো বসন্ত হয়ে আর কখনো গুটি বসন্ত হত না। এ তথ্যের যদিও কোন প্রমাণ ছিল না কিন্তু এ ধারণাই প্রচলিত ছিল তৎকালীন সমাজে। এদিকে জেনারের কাছে বসন্তের রোগীরা আসলেও কিছুই করতে পারতেন না জেনার। চোখের সামনে অসহায়ের মত অবলোকন করতে হত মৃত্যুর মিছিল। নিরুপায় হয়ে জেনার সেই সময়ের খ্যাতিমান সব চিকিৎসকদের সাথে যোগাযোগ করলেন কিভাবে নির্মূল করা যায় এই রোগ। কিন্তু খালি হাতেই ফিরতে হল তাকে। কেউ পারলো না রোগমুক্তির সন্ধান দিতে।
জেনার অনুভব করতে লাগলেন, এবার তাকেই এগিয়ে আসতে হবে, কিছু করতে হবে। শুরু হলো তার পড়াশোনা, গবেষণা। বিভিন্ন পুঁথি ও বইপত্র থেকে জেনার জানতে পারলেন, পূর্বে চীন দেশের লোকেরা বসন্ত নিরাময়ের জন্য একধরণের টিকা ব্যবহার করত। বসন্ত আক্রান্ত রোগীর দেহ থেকে খানিকটা খুঁজ অন্যের শরীরে প্রবেশ করানো হলে সুস্থ মানুষটি সামান্য অসুস্থ হলেও তার আর কোনদিন বসন্ত হত না। কিন্তু একাজে খুঁজ ঢোকাবার সময় বেশিরভাগ মানুষই অসুস্থ হয়ে মারা যেত। এবিষয়েই শুরু বিজ্ঞান। হয় তার গবেষণা। মনেপ্রাণে ভাবতে লাগলেন প্রচলিত এই পদ্ধতিতে কোথাও সত্য লুকিয়ে আছে কিনা তা যাচাই করে দেখা প্রয়োজন। দীর্ঘদিনের গবেষণা শেষে ১৭৮৬ সালে জেনার উপলব্ধি করলেন গো বসন্ত সমন্ধে প্রচলিত সেই ধারনাটি কিছুটা সত্য। এই রোগটি সাধারণত গরুকে আক্রান্ত করে। অবশ্য এতে গরুর বিশেষ ক্ষতি হয় না। বিভিন্ন ধরনের গরুর বসন্তের পুঁজ এনে পরীক্ষা করে দেখলেন, শুধুমাত্র এক ধরনের গো বসন্তের খুঁজই গুটি বসন্তের বিপক্ষে কার্যকর। কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে এটি কতটা কর্মক্ষম হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারলেন না। এদিকে দেশজুড়ে ক্রমশ বসন্তের বিস্তার। প্রতিনিয়ত মৃত্যুর ভিড়ে জেনার ভাবতে লাগলেন, কবে শেষ হবে এই মৃত্যুর কান্না? নেলনিস নামক এক গোয়ালিনী জেনারের বাড়িতে আসত দুধ দিতে। একদিন তার কাছে জেনার জানতে পারলেন, বাসার সবাই বসন্তে আক্রান্ত হলেও, তার কিছুই হয়নি তার হাতে। ছোট ছোট গুটি বের হয়েছে মাত্র। জেনার অনুমান করলেন যেহেতু কয়েকমাস আগে নেলনিসের যো বসন্ত হয়েছে, তাই গুটিবসন্ত তাকে আক্রমণ করতে পারেনি।। অতঃপর কুড়ি বছরের গবেষণা শেষে ১৭৯৬ সালের ১৪ ই মে জেনার প্রথমে সারা নেলনিসের হাতের গুটি থেকে ইনজেকশনে করে সামান্য পুঁজ নিয়ে সেই খুঁজ জেমস ফিলিপ নামে আট বছর বয়সের একটি বাচ্চা ছেলের শরীরে প্রবেশ করিয়ে দেখলেন টিকা নেওয়ার দুএকদিন পরেই যেখানে টিকা নেওয়া হয়েছে সে জায়গায় খায়ের মত ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। ইতোপূর্বে জেমসের বসন্ত হয়নি। কয়েকদিন ধরে জেমসকে নিয়ে বসন্ত রোগীদের মধ্যে চিকিৎসার কাজ সারলেন। কিন্তু জেমসের বসন্ত হলো না। তিনি অনুভব করতে লাগলেন, এবার তাহলে সফল হয়েছে ভার দীর্ঘদিনের সাধনা। তিনি বুঝতে পারলেন এভাবে গুটিবসন্তের কবল থেকে কোটি কোটি মানুষকে বাঁচানো সম্ভব। তিনিই প্রথম সফলভাবে গুটিবসন্তের টিকা আবিষ্কার করেন। পরবর্তীতে এই টিকা পদ্ধতি আরো উন্নত হয়েছে এবং বিভিন্ন ছোঁয়াচে রোগের ক্ষেত্রে সফলভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। এই টিকাদান পদ্ধতি প্রথমে ব্রিটেনে এবং পরবর্তীকালে পৃথিবীর সকল দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। এমনকি নেপোলিয়ান তাঁকে এই জন্য পুরস্কৃত করেন এবং সমস্ত ফরাসি সৈনিকদের টিকা গ্রহণ করান। একবার এক যুদ্ধে ইংল্যান্ডের বন্ধু সৈনিককে বন্দী করে রেখেছিলেন সম্রাট নেপোলিয়ন । সেই বন্দীদের মুক্তিনা জন্য চিঠি লিখে লিখে পাঠালেন জেনার। সামরিক দপ্তর থেকে সেই চিঠি গিয়ে পৌছাল নেপোলিয়নের হাতে। চিঠি পেয়ে নেপোলিয়ন বললেন, এই মানুষটির থেকে কোন অনুরোধ এলে তা আমাদের পক্ষে ফেরানো সম্ভব নয়। ১৭৯৮ সালে জেনার একটি বই প্রকাশ করেন। বইটির নাম ছিল “An enquiry into the causes and effects of the variolae vaccine.” ভ্যাকসিন আবিষ্কারের সময় তাঁর ক্রমাগত গবেষণার ফলে নিয়মিত চিকিৎসাদান সম্ভব হচ্ছিল না। ১৮০২ সালে পার্লামেন্টের তরফ থেকে দশ হাজার পাউন্ড তাঁকে দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীকালে ১৮০৬ সালে আরো কুড়ি হাজার পাউন্ড দেওয়া হয়েছিল তাঁর গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার জন্য। ১৮০২ সালে তিনি আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস এবং রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস এর সম্মানজনক বিদেশি সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৮০৩ সালে তিনি জেনারিয়ান সোসাইটির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এই সোসাইটির উদ্দেশ্য ছিল গুটিবসন্তের টিকা সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া। ১৮০৮ সালে সরকারি সাহায্য নিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয় ন্যাশনাল ভ্যাকসিন স্টাবলিশমেন্ট। কিন্তু মতবিরোধের কারণে পরে তিনি পরিচালক পদ থেকে সরে দাঁড়ান। পরবর্তীকালে তিনি ন্যাচারাল হিস্ট্রির ওপর তাঁর গবেষণা চালিয়ে যান। এর ফলস্বরূপ ১৮২৩ সালে তিনি তাঁর ‘অবজারভেশন অন দা মাইগ্রেশন অফ বার্ড’ গবেষণাপত্রটি রয়্যাল সোসাইটিতে পেশ করেন। ১৮২১ সালে জেনার রাজা চতুর্থ জর্জের প্রধান চিকিৎসক হিসেবে নিযুক্ত হন। এছাড়াও এই সময়ে তিনি বার্কলের মেয়র ও ‘জাস্টিস অফ দি পিস’ এর পদেও নিযুক্ত হন। ২০০২ সালে বিবিসি এডওয়ার্ড জেনারকে ১০০ গ্রেটেস্ট ব্রিটেনস এর তালিকায় স্থান দেয়। জেনার সময় পেলেই স্ত্রী পুত্রকে নিয়ে দূরে কোথাও ছুটি। কাটাতে যেতেন। তিনি চেয়েছিলেন ছেলেও যেন তার মত চিকিৎসক হিসেবে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করুক। কিন্তু ১৮১০ সালে আকস্মিকভাবে ছেলের মৃত্যু এবং ১৮১৫ সালে স্ত্রীর মৃত্যুতে একেবারে ভেঙে পড়ে তার জীবন। সেই সময় তার বন্ধুকে দেওয়া একটি চিঠিতে জেনার লিখেছিলেন, আমার চারদিকে সব যেন শূন্য হয়ে গেলো।” মৃত্যুর বেদনা ভুলতে জেনার ফিরে গেলেন প্রকৃতির সংসর্গে। জীবনের শেষ লেখাটিও লিখেছিলেন পরিযায়ী পাখিদের নিয়ে। সেসময় একটি মানুষের কথা খুব মনে পড়ত তাঁর। বহু বছর আগে দেখা সেই অসুস্থ সন্তানের মা, যার চোখের পানি তরুণ জেনারকে অনুপ্রেরণা দিয়েছিল ভ্যাক্সিন আবিষ্কারের এই মহান কাজটি সম্পন্ন করতে। বহুদিন যাবত জেনার খুঁজেছে সেই মাকে। জীবনের শেষ মুহূর্তে এসেও জেনারের যেন কোন দুঃখ কষ্ট ছিল না। কারণ সেই মায়ের কান্না চিরদিনের জন্য মুছে দিতে পেরেছিলেন জেনার। কিন্তু পৃথিবীকে কাঁদিয়ে ১৮২৩ সালের ২৬ শে জানুয়ারি চির বিদায় নিলেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানের বরপুত্র, মানব দরদী এডওয়ার্ড জেনার। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। চিরদিনের জন্য নিভে গো গেলো তার জীবনের দীপশিখার আলো। কিন্তু কীর্তিমানের কি মৃত্যু হয়? মৃত্যু এডওয়ার্ড জেনারের জীবনকে সংক্ষিপ্ত করেছে সত্য কিন্তু তার মহৎ কর্মের জলস্রোতে ত্যাগ ও মানবসেবার অবিসম্বাদিত অব্যয় অক্ষয় যে আদর্শকে তিনি রেখে গিয়েছেন, তা চির বহমান থাকবে নিরন্তর।