আমরা মানুষ; আমাদের সকলের বয়সের সাথে সাথে জীবনের চাওয়া-পাওয়া, ভালোলাগা, স্বপ্ন দেখা অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়ে থাকে । পরিবর্তন হয় আমাদের চিন্তা জগতের। কিন্তু একটা সময় পরে আমাদের সকলের চিন্তা আসে আমি পড়াশোনা শেষ করে ভবিষ্যতে কি করবো। আমি তো ইউনিভার্সিটি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং বা মেডিকেল থেকে ডাক্তারি শেষ করেছি, কিন্তু ভবিষ্যতে আমি কি আমার সাবজেক্ট অনুযায়ী কিছু করতে পারবো?
প্রিয় শিক্ষার্থী আপনি লক্ষ্য স্থির করুন। আপনি কী অর্জন করতে চান, তা নিয়ে প্রতিদিন একটু করে চিন্তা করুন। একসঙ্গে অনেক বড় লক্ষ্য নির্ধারণ না করে ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন এবং সে অনুযায়ী সামনে এগিয়ে যান। এটি আপনাকে চূড়ান্ত বা বড় লক্ষ্য পূরণে সাহায্য করবে আমি আশা করি। আর অতীতের যে কোন আনন্দের স্মৃতিচারণ করুন। কারণ স্মৃতিচারণ আমাদের ইমোশনগুলোকে বাড়িয়ে দেয়, তাই আগের বিভিন্ন সাফল্য মনে করুন আত্মবিশ্বাস বাড়বেই৷ কবির ভাষায়ঃ–
“ছোট ছোট বালুকণা
বিন্দু বিন্দু জল,
গড়ে তোলে মহাদেশ
সাগর অতল।”
আমি পারবোই। আমাকে পারতেই হবে। আমি হয় জিতবো, নয় শিখবো, তবে কখনোই হাল ছাড়বো না। একজন মানুষ হিসেবে আপনার জীবন কেমন হবে, আপনি কোন জায়গায় পৌঁছাতে পারবেন, জীবন থেকে আপনি কী কী পেতে চান। তাই আমাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। আর সেই অনুযায়ী চেষ্টা করতে হবে। আমরা অনেকেই জানি না যে, আমাদের সফলতার শুরু হয় মন থেকেই। মনই আমাদের সফলতার প্রথম সোপান। আমাদের পরিকল্পনা, সময়, কর্ম, আমাদের সাহস সেই সফলতা পাওয়ার জন্য আমাদেরকে কাজের দিকে পরিচালিত করবে। আপনি যখন কোনকিছু কল্পনা করেন, তখন সেটা পাওয়ার জন্য আপনার মনে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়, আপনার মন সেটা পেতে চায়। আর সেটা পেতে মস্তিষ্ককে কাজের দিকে পরিচালিত করার জন্য বরাবরই তাগিদ দিতে থাকে। ফলে প্রচন্ড আকাঙ্ক্ষা একসময় পরিণত হয় কাজে। কাজ মানেই বাস্তবতার শুরু।
এক সময় ক্লাসে বন্ধুদের সামনে কথা বলতে আমার হাত-পা, বুক কাঁপতো, কষ্ট হত। কিন্তু এখন আমি যে কোন সেমিনারে অনেকের উপস্থিতিতে কথা বলতে পারি আর কষ্ট হয় না। হয়তো অনেকের কাছে আমার কথা ভালো লাগতে না পারে কিন্তু আমার ভালোলাগা হচ্ছে আমি সবার সামনে কথা বলতে পারি আমার আর হাত-পা, বুক কাঁপে না কষ্ট হয়না। আমি চেষ্টা করেছি সবার সামনে কথা বলবো আমি এখন বলতে পারি আপনিও পারবেন। এভাবে যে কোন কাজের চেষ্টা করেন পারবেন।
একটা বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে, অধিকার এমনি এমনি আসেনা, অর্জন করতে হয়। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে তা এমনি এমনি হয়নি ৩০ লক্ষ বাঙালির জীবনের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে।
আপনি যখন নিজের কাজ শুরু করেন, তখন আপনার স্বপ্নগুলো বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করে। এসব আসলে একটা চক্রের মতো। প্রথমে আপনি স্বপ্ন দেখেন, তারপর কাজ করেন, আপনার স্বপ্ন এরপর বাস্তবে পরিণত হয় এবং আপনি আবার নতুন কোন স্বপ্ন দেখতে থাকেন, নতুন কিছু পাওয়ার জন্য। আপনার ইচ্ছাশক্তি এই পুরো চক্রকে নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থাৎ, আপনার নিজের ইচ্ছাশক্তি থাকলে আপনি যেকোন কিছুই পেতে সক্ষম। এ সম্পর্কে একটি উদাহরণঃ–
ধরুন, আপনি একজন সফল ব্যবসায়ী হতে চান। আপনার মনে ব্যবসা নিয়ে শুরুতেই কল্পনা আসবে। এই কল্পনার দিকে আপনাকে ধাবিত করে থাকে বাস্তব জীবনের সফল মানুষদের প্রাপ্তি। আপনি যখন চারদিকে তাকিয়ে দেখেন সফল মানুষেরা সমাজে সম্মান পায়, তাদের কোন অভাব থাকে না এবং তারা নিজেদের জীবনকে সুন্দরভাবে কাটাতে পারে, তখন আপনার মনেও সফল ব্যবসায়ী হওয়ার কল্পনা জায়গা করে নেয়। এই কল্পনা থেকেই আপনি নিজের কাজ শুরু করেন, ব্যবসায়িক পরিকল্পনা করে নেমে পড়েন মাঠে। একটা সময় আপনার ব্যবসা ঠিকই সফলতার সাথে গন্তব্যে পৌঁছে যাবে। অর্থাৎ বাস্তবায়ন হবে। এরপর আপনি স্বপ্ন দেখবেন নিজের জীবনে নতুন কিছু পাওয়ার জন্য। প্রশ্ন হচ্ছে, কোনকিছু পাওয়ার জন্য কিংবা জীবনে সফল মানুষ হতে হলে প্রচুর কাঠখড় পোড়াতে হয়। এসব দেখে যদি আপনি হাল ছেড়ে দেন, তাহলে কি আপনি সফল হতে পারবেন? কখনোই পারবেন না। তাই সবসময় নিজের মনে ধারণ করে নিতে হবে- “আমি পারবোই। আমাকে পারতেই হবে। আমি হয় জিতবো, নয় শিখবো, তবে কখনোই হাল ছাড়বো না।” এই কথাটিই আপনাকে চলার পথে সকল প্রতিবন্ধকতা থেকে বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম, যদি আপনি এটা মনের মাঝে ধারণ করেন এবং সে অনুসারে জীবনযাপন করেন।
আর আপনি যদি সব সময়ই নিজের সমস্যার দিকে তাকিয়ে থাকেন, তাহলে কখনোই সামনের দিকে এগোতে পারবেন না। সমস্যা ছিলো, আছে এবং সবসময়ই একের পর এক সমস্যা আমাদের জীবনে আসতে থাকবে। আপনাকে নজর দিতে হবে সমাধানে। আর এ ধরণের মানসিকতা তথা হাল না ছাড়ার ও নিজের ওপর আস্থা রাখার অবস্থাকেই বলা হয়ে থাকে- আত্মবিশ্বাস। অতএব, আত্মবিশ্বাস বাড়ান। আপনি ইউনিভার্সিটি শেষ করে কোন জায়গায় নিজেকে নিয়ে যাবেন । জীবনের লক্ষ ঠিক করুন। পূরণ করতে শিখুন নিজের স্বপ্ন বাস্তব জীবনে নিজেকে গড়ে তুলুন একজন সফল মানুষ হিসেবে, দেশ প্রেমিক ও সুনাগরিক হিসাবে।
– হুমায়ন কবির
সম্পাদক, দ্যা ক্যাম্পাস মিরর