25 C
Dhaka
Wednesday, December 6, 2023
বাড়িআন্তর্জাতিকরাজনৈতিক সংকটে আন্তর্জাতিক পরাশক্তির ভূমিকা

রাজনৈতিক সংকটে আন্তর্জাতিক পরাশক্তির ভূমিকা

মানুষ প্রকৃতিগতভাবে সামাজিক ও রাজনৈতিক জীব। প্রতিটি মানুষই কোনো না কোনোভাবে রাজনীতির সাথে জড়িত, সেটা প্রত্যক্ষ হোক কিংবা পরোক্ষ। বিখ্যাত দার্শনিক এরিস্টটলের ভাষ্যমতে, “যার সাথে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই, হয় সে পশু না হয় দেবতা।” এর মানে এই নয় যে, তাকে কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে হবে। কোনো ব্যক্তি রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত না থেকেও রাষ্ট্রের উন্নয়ন ও অবকাঠামোতে ভূমিকা রাখতে পারে। তবে নিজ রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য তাকে সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে।

 

রাষ্ট্র গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে সার্বভৌমত্ব। এটি যখন হুমকির মুখে পড়ে তখন রাষ্ট্র তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তখন হয় এটি কোনো তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত হয়। অথবা ব্যর্থ রাষ্ট্রে। কোনো রাষ্ট্র যখন কোনো আপোষের ভিত্তিতে কোনো পরাশক্তির কাছে ধরনা দেয় তখন সে হয়ে যায় পরাশক্তির হাতের পুতুল। পরাশক্তি তখন ওই রাষ্ট্রকে নিজেদের সুবিধামতো ঘোরাতে থাকে। পরাশক্তিগুলো কখনোই স্বার্থহীনভাবে অন্য রাষ্ট্রকে সাহায্য করে না। হয় তারা নিম্ন রাষ্ট্রগুলোকে আয়ত্বে (Dominate) রাখার জন্য অথবা প্রতিদ্বন্দ্বি কোনো রাষ্ট্রকে টক্কর দেওয়ার জন্য এরুপ করে থাকে। বর্তমান বিশ্বে আমরা এর নজির দেখতে পাই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব দুটো বৃহৎ অংশে বিভক্ত হয়ে যায় । একদিকে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহ যার মূলে ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন আর অন্যদিকে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রসমূহ যার মূলে ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানকে সর্বাত্মকভাবে সাহায্য করে। কিন্তু পরবর্তীতে এই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই সন্ত্রাস নির্মূলের নামে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে প্রায় ২০ বছর যুদ্ধ করে। মূলত সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধে আফগানিস্তানকে সাহায্য করার উদ্দেশ্য ছিল সমাজতন্ত্রের অবসান ঘটানো। একই ঘটনা হয় ইরাকের ক্ষেত্রেও, ইরাক যখন ইরানের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল ইরাকের পক্ষে। পরবর্তীতে তারাই ইরাককে যুদ্ধের মাধ্যমে প্রায় ধ্বংস করে দেয়। এভাবে পরাশক্তিরা মূলত নিজেদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক স্বার্থের জন্য কোনো রাষ্ট্রের সাথে মিত্রতা করে আবার কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালায়। এতে ওই ভুক্তভোগী দেশ ও জনগণের অবস্থা হয়ে যায় নাজেহাল।

 

কখনো কখনো এর জন্য শাসকের পাশাপাশি জনগণও দায়ী থাকে। অনেক সময় জনগণ শাসকদের আচরণে রুষ্ট হয়ে এরকম পথ বেছে নেয়। আমরা সকলেই লিবিয়ার সাবেক শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফি সম্পর্কে অবগত। ২০১১ সালের আরব বসন্তে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে জনগণ তাদের শাসকদের বিরোধিতায় রাস্তায় নেমে পড়ে। গাদ্দাফির পতনের জন্য লিবিয়ার জনগণ বিদ্রোহ করে এবং শেষ পর্যন্ত তাকে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে লিবিয়ার অবস্থা সম্পর্কে আমরা সকলেই অবগত যা এখন পূর্বের তুলনায় আরো করুণ অবস্থা। তাদের এই অবস্থার জন্য তারা নিজেরাই দায়ী। এর পেছনে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো (NATO) জোট। এরকমভাবে কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ অবস্থার অবনতির জন্য সে দেশের মানুষই অনেকাংশে দায়ী থাকে। কখনো শাসকদের বিরোধিতার জন্য আবার কখনো বিরোধী দলকে দমনের জন্য বিদেশি পরাশক্তিদের সমর্থন নেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু দিনশেষে এটি খাল কেটে কুমির আনার মতো ভয়ংকর রূপ নেয় । বরঞ্চ এখানে নিজেদের সমস্যা নিরসনের জন্য নিজেদেরই চেষ্টা করা উচিত। ঘরের সমস্যা সমাধানের জন্য বাইরের মানুষকে ডেকে আনা কখনোই দেশের জন্য শান্তি নয় বরং ধ্বংসই ডেকে আনে। মাঝখান থেকে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল নিজেদের ফায়দা লুটে নেয়। এজন্য আমাদের কখনোই উচিত নয় কোনো পরাশক্তির ফাঁদে পড়া, এতে আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে।

 

-শাহরুখ হোসেন তন্ময়

– লেখক, আইন বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

সম্পর্কিত

মন্তব্য বাদ দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বাধিক পঠিত