মানসম্মত ঔষধ তৈরির লক্ষ্যে স্বাস্থ্য সেবায় গুরুত্বপূর্ণ মা ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে একদল দক্ষ ফার্মাসিস্ট। বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে স্বাস্থ্যের জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানে প্রতিবছর দিবসটি পালিত হয়। সারা বিশ্বে ২০১০ সাল থেকে একযোগে পালিত হয়ে আসছে এই দিবসটি। প্রতি বছর ২৫ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন ধরনের প্রতিপাদ্য নিয়ে দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে।
স্বাস্থ্য সেবায় যেমন ডাক্তার ও নার্সের ভূমিকা অপরিসীম, ঠিক তেমনিভাবে ওষুধের সংরক্ষণ, গুণগত মান, সঠিক ওষুধ নির্বাচন ও ওষুধের যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিতকরণের জন্য স্বাস্থ্য সেবায় গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের ভূমিকাও অপরিহার্য। কিন্তু ফার্মাসিস্টদের কর্মক্ষেত্রে সরকারি চাকুরির উদ্যোগ এখনো গৃহীত হয় নি। সরকারি হাসপাতালগুলোতে ফার্মাসিস্ট নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ থাকায় প্রতিবছর ই দক্ষ ফার্মাসিস্ট বিদেশের পথে পাড়ি জমাচ্ছেন। অথচ দেশে প্রতি বছর সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট বের হলেও তাদের ৮০ ভাগই সরাসরি ওষুধ উৎপাদনের সাথে জড়িত। প্রতিবছর দক্ষ ফার্মাসিস্ট বের হওয়ার পরও সরাসরি স্বাস্থ্যসেবায় কাজে না লাগাতে পারার ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্যসেবার প্রটোকলে ফার্মাসিস্টের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে না পারলে রোগীরা সবসময় বিশ্বমানের সেবা থেকে বঞ্চিত থাকবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা।
একজন ফার্মাসিস্টের কর্মক্ষেত্র শুধু ঔষধ তৈরিকারক প্রতিষ্ঠানে নয় বরং ঔষধ নিয়ে গবেষণামূলক কাজ, ঔষধ প্রশাসনের মাধ্যমে কাজ করে ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ, পাবলিক হেলথ সেক্টরে কাজ এমনকি মডেল ফার্মেসি বা মডেল মেডিসিন শপের উদ্যোক্তাও হতে পারে। উন্নত বিশ্বের হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসকের পাশাপাশি গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট থাকা আবশ্যক রোগীর দেহে যেকোনো ঔষধ প্রয়োগের অগ্রাধিকার রাখেন ফার্মাসিস্টরা। তাছাড়া, ডাক্তারদের পেসক্রিপশনের পরবর্তী সময়ে পুনরায় ফার্মাসিস্টরা তা দেখে থাকে। অনেক সময় ঔষধের অতিরিক্ত ডোজের কারণে শরীরে টক্সিসিটি তৈরি হয়। যার কারণে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হলো হসপিটাল ফার্মাসিস্ট নিয়োগ করা। যা বর্তমান বাংলাদেশের অনেক হাসপাতালেই নাই। এছাড়াও, পেশক্রিপশন ছাড়া বহির্বিশ্বে ফার্মেসীতে ঔষুধ নিতে গেলেও ফার্মাসিস্টদের পরামর্শ লাগে।
তাই, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ও সরকারি ব্যবস্হাপনায় সকল সুযোগ সুবিধা চালু করে এদেশের দক্ষ ফার্মাসিস্টদের কাজে লাগিয়ে দেশের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে। সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে পারলে ফার্মাসিস্টরা বিদেশমুখী হবে না। তাছাড়া, ফার্মাসিস্টদের জন্য দেশে পর্যাপ্ত গবেষণার ব্যবস্থা করতে হবে। অদূর ভবিষ্যতে গবেষণালব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে দেশের অন্যতম ঔষধ খাতকে সম্ভাবনাময় একটি রপ্তানি খাতে পরিণত করা সম্ভব। উচ্চমানের ও স্বল্প মূল্যের জেনেরিক ঔষধের জন্য বাংলাদেশ একটি প্রধান বৈশ্বিক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুসারে, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ঔষধ রপ্তানি হয়েছে ১৭ কোটি ৫৪ লাখ ২০ হাজার ডলার। ঔষধ খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট ফার্মাসিস্টদের সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিতের মাধ্যমেই এই রপ্তানি শিল্পকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব।
আনসারুজ্জামান সিয়াম
– লেখক
শিক্ষার্থী
ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস
গণ বিশ্ববিদ্যালয়, সাভার।