মানুষ জন্মগতভাবে স্বাধীন। কিন্তু প্রত্যেকটি জায়গায় তাকে কিছু নিয়মের মধ্যে থাকতে হয়। দার্শনিক রুশোর ভাষায়, “Man is born free, but everywhere he is in chain.” আমরা যেখানেই থাকি না কেন আমাদের কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। কোনো সমাজ বা রাষ্ট্রে বসবাস করতে গেলে কিছু শর্ত মেনেই বসবাস করতে হয়। মানুষ হিসেবে আমাদের কিছু মৌলিক অধিকারও আছে যা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। নাগরিক হিসেবে আমাদের কিছু মৌলিক অধিকার আছে যেমন- চলাফেরার স্বাধীনতা, বাক ও সংবাদ প্রকাশের স্বাধীনতা, ধর্ম পালনের স্বাধীনতা ইত্যাদি যা সংবিধানের ৩য় ভাগের (২৬-৪৪) নং অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে বাক স্বাধীনতা যা ৩৯ নং অনুচ্ছেদের ২(ক) তে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি হরণ করার অধিকার কারোর নেই। এমনকি মৌলিক অধিকার হরণ হলে এর প্রতিকার হিসেবে হাইকোর্ট বিভাগে রিট দায়ের করার অধিকার আমাদের রয়েছে। কিন্তু এই স্বাধীনতা বলতে আমরা কি বুঝি? এই স্বাধীনতার মানে কি আমরা যা ইচ্ছা করবে তাই বলতে পারবো? অবশ্যই না, এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ৩৯ নং অনুচ্ছেদের ২(ক) তে বাক ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের পাশাপাশি জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতার স্বার্থে কিছু বাধানিষেধের কথাও বলা হয়েছে। কেউ চাইলেই অন্যের অধিকার হরণ বা সম্মান নষ্ট করার জন্য বিবৃতি দিতে পারবে না, অন্যথায় এটি ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৪৯৯ নং ধারা অনুযায়ী মানহানি বলে গণ্য হবে। আবার কেউ চাইলেই কোনো ধর্মের অবমাননা করে বিদ্বেষ ছড়াতে পারবে না, অন্যথায় এটি ফৌজদারি দণ্ডবিধির ২৯৫(ক) ধারা অনুযায়ী ব্লাসফেমি অপরাধ বলে গণ্য হবে। সংবিধানের ৪১ নং অনুচ্ছেদের ১(ক) তে ধর্ম পালনের স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে। অন্যের ধর্ম পালনে কোনো বাধা ও বিঘ্ন ঘটানো যাবে না। কিন্তু আমরা প্রায়ই দেখি, অনেকেই বাক স্বাধীনতার নামে অন্যের অধিকার হরণ ও ধর্মীয় অবমাননা করছে যা সুস্পষ্ট শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এসব অপরাধের সাথে যারা যুক্ত তাদেরকে আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তি দেওয়া জরুরি। অন্যথায় সমাজ ও রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সৃষ্টি হতে পারে। এতে সমাজ ও রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তার বিঘ্ন ঘটে। তাই এ বিষয়ে সতর্ক থাকা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
Shahroukh Hossain Tonmoy
Department of Law
Daffodil International University