পর্ব এক,
শীতল ঘরের তরল হিলিয়াম আস্তে আস্তে কমে আসছে। হিলিগ্রোমিটারের কাটা তরতর করে নেমে যাচ্ছে নিচে।অক্সিমিটারের কাটা ক্রমন্বয়ে ৩০ এর ঘর পেরিয়ে ৪০ এসে দাড়িয়েছে। আর কিছুক্ষন বাদেই জেগে উঠবে মহাকাশ যান ফিনিক্স ২৯ এর সকল যাত্রী। পৃথিবীর হিসাবে ১২০ বছর পর ঘুম ভাঙছে সবার। আরো ৭০০ বছর পর ঘুম ভাঙার কথা ছিল সবার। নিশ্চই যান্ত্রিক কোন গোলযোগ দেখা দিয়েছে যার জন্য মহাকাশ যানের কেন্দ্রীয় কম্পিউটার ক্লোরা জাগিয়ে তুলেছে সকল ঘুমান্ত যাত্রীদের। ক্যাপস্যুলের পুরু কাচের ভেতরে আস্তে আস্তে চোখের পাতা মেল্ল লিরা। একটা মিষ্টি বেলিফুলের কোমল ঘ্রাণের সাথে ভোতা এক ধরনের অবসাদ এসে ভর করেছে।মস্তিষ্কের প্রত্যেকটা নিউরনে হিমগ্লোবিনে ভর করে ছুটে চলেছে অক্সিজেন। জেগে উঠছে হাইপোথ্যালামাস।বেশ ঠান্ডা লাগছে ওর। দাঁতে দাঁত ঠুকে যাওয়ার মত ঠান্ডা। এখনো পুরো দেহ সচল হয়ে ওঠেনি। ক্যাপসুলের পুরু মনিটরে বডি স্টিমুলেটরিতে ১০ শতাংশ লাল আলোয় ভরে উঠেছে। এর মানে ওর জানা। মস্তিষ্ক সচল হতে শুরু করেছে। অল্পক্ষনের মধ্যেই সমস্ত দেহ জেগে উঠবে। আবার চেখ বন্ধ করে নিল লিরা। ভাবতে চেষ্টা করল সুখময় কোন স্মৃতির কথা। আস্তে আস্তে সচল হয়ে উঠল সমগ্র দেহ।
চোখের সামনে থেকে নেমে গেল ঘোলাটে কাচের আবরন। তার যায়গায় ঝুকে আছে লির উদ্বিগ্ন পাংশু মুখ। লির মুখের দিকে তাকাতেই বুকের ভেতরটা কেমন যেন দুমড়ে মুচড়ে উঠলো লিরার।চোখে ভেসে উঠলো সূর্য্য নামক নক্ষত্রের একটা ময়াময়ী নীলচে গ্রহের কথা। ১৫ বিলিয়ন বছর আগে বিগব্যাঙের ফলে তৈরি হয়েছিল পৃথিবী নামক ঐ গ্রহটা। প্রানের বিকাশ ঘটেছিল অত্যান্ত দ্রুত। লিরা বড্ড ভালবাসতো পৃথিবী নামক ঐ গ্রহটাকে। ভাবতেই কষ্ট লাগছে সেই গ্রহটা আজ আর নেই। ধ্বংশ হয়ে গেছে তার সমস্ত প্রাণ বৈচিত্র। ১০০ বিলিয়ন মেগাপার্সেক শক ওয়েভ রেডিয়েশনে চুরমার করে দিয়েছে সৌর জগৎ।ভেঙে পড়েছে ওজন স্তর।মানুষের অপব্যাবহারে দূষিত হয়েগিয়েছিল পৃথিবীর বায়ুমন্ডল।আর্টিফিশিয়াল নোবেল গ্যাস দিয়ে মেরামত করা হয়েছিল ওজন স্তর।বাইরে বেরুতে গেলে পরতে হত সিনথেটিক পারসোনাল প্রটেকশন ইকুয়েপমেন্ট।তবুও সেই দূষিত, নোংরা পৃথিবীর জন্য মনটা হুহু করে উঠলো লিরার। মহাবিশ্ব থেকে চিরতরে বিলিন হয়ে যাচ্ছিল মানুষের অস্তিত্ব।নিজেদের অস্তিত্বকে মহাবিশ্বে টিকিয়ে রাখতে ১০ হাজার হিমায়িত ভ্রুন আর ১০০ জন নারী পুরুষকে তুলে দেওয়া হয় মহাকাশযানে। তৈরি করা হয় সপ্তম পর্যায়ের সুপার কম্পিউটার ক্লোরা। মানুষের বসবাসের উপযোগী গ্রহের সন্ধান পেলে জাগিয়ে তুলবে সকল ঘুমন্ত যাত্রীকে। আবার তৈরি হবে নতুন পৃথিবীতে নতুন সভ্যতা।কিন্তু এক্ষুনি কেন জাগিয়ে তোলা হল বুঝতে পারছেনা লিনা আর লি। লি হাত বাড়ায় লিনার দিকে। ক্যাপাসুল থেকে বেরিয়ে আসে লিনা। ঠিক তখনি নিক্কন মেয়েলি কন্ঠে ভেসে ভেসে এল শীতল ঘরের ছাদ ফুড়ে, মহামান্য লি এবং মহামান্য লিনা আপনাদের জাগিয়ে তোলার জন্য আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। মহাকাশযানে একটা বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমাদের মহাকাশযান ক্রাশ হতে চলেছে। পৃথিবী ধ্বংশকারী সেই ১০০ বিলিয়ন পার্সেক সক ওয়েভ ছুটে আসছে আমাদের দিকে। আমরা প্রবল বেগে ছুটে চলেছি একটা নিউট্রনো স্টারের দিকে। পৃথিবী ছেড়ে আমরা ইতিমধ্যে ১০০ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে চলে এসেছি। কিন্তু সেই সকওয়েভকে পিছু ছাড়া করতে পারিনি।এই ১২০ বছরে ৪৯ বার এমন বিপদের মুখোমুখি হতে হয়েছে। প্রতিবার আমি জাগিয়ে তুলেছি একজোড়া করে মানব মনবীকে। কেননা মহকাশযানের বিপদজনক কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বুদ্ধিমত্তা স্কেলে ৮ এর উপরে কোন মানুষের কমান্ডের প্রয়োজন। এই সক ওয়েভের হাত থেকে বাঁচতে ২ টা কাজ করা যায়, প্রথমতো এন্টিসকওয়েভ ফায়ার করে সক ওয়েভ ডেস্ট্রয় করা। আর দ্বিতীয়ত হাইপারড্রাইভ দিয়ে সময়ের গন্ডি পেরিয়ে যাওয়া। যা অত্যান্ত বিপদজনক। আমাদের থ্রি ডাইমেনশনাল টাইম থেকে যদি ভিন্ন কোন ডাইমেনশনে হাইপারড্রাইভ দেওয়া হয় তবে সঙ্গে সঙ্গে প্রবল বিষ্ফরনে ডেস্ট্রয় হয়ে যাবে আমাদের মহাকাশযান। তার সাথে সাথে মহাবিশ্ব থেকে বিলিন হয়ে যাবে মানুষের অস্তিত্ব। প্রতিবার সবাই বেছে নিয়েছেন এন্টিসকওয়েভ ফায়ারিং। যাতে অন্ততপক্ষে কয়েক বছর পিছিয়ে পড়ে এই সক ওয়েভ। কিন্তু সমস্যা দেখাদিয়েছে হিমোলাইসিস ফ্যাক্টর নিয়ে। মানুুষের লোহিত রক্তকনিকার প্রতি ১০০ গ্রামে হিমগ্লোবিন আছে ১৫ গ্রাম। যার ১৫ ভাগের ১ ভাগ আছে আয়রন বা লোহা। সকওয়েভ প্রতি ইলেকট্রন আল্ট্রা ম্যাগনেটিক রিয়াকশনের ফলে প্রবল বেগে আকর্ষণ করে লোহার ইলেকট্রনকে। যার ফলে ফায়ারিং স্কোয়াডে বিষ্ফরন ঘটে মানব দেহের। এখন এই পুরো মহাকাশযানে কেবল মাত্র জীবিত প্রাণি আছেন আপনারা দুজন। এতগুলো কথা বলে থামলো মহাকাশযানটির কেন্দ্রিয় কম্পিউটার ক্লোরা।
সঙ্গে সঙ্গে কোন কথা বলতে পারেনা ওরা দুজন। সমস্ত পৃথিবী জুড়ে বুদ্ধিমত্তা স্কেলে ৮ এর ঘরে মানুষের সংখ্যা হাতেগোনা। তাদের ভেতরে বাছাই করা ১০০ জনকে পাঠানো হয়েছিল এই ফিনিক্স মহাকাশযানে। আসন্ন মৃত্যকে সামনে রেখে কি গভীর আবেগে পৃথিবীবাসিরা তাকিয়ে ছিল উড়ন্ত ফিনিক্সের দিকে। টলমলে চোখে কল্পনা করেছিল নতুন পৃথিবীতে তাদেরি অনাগত বংশধর আবার গড়ে তুলবে সভ্যতা।তারা আর দূষিত করবেনা তাদের নতুন পৃথিবীকে। ভাবতে ভাবতে সক ওয়েভে ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল সকলের দেহ। ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছিল স্বাধের পৃথিবী। ধ্বংশ হয়ে গিয়েছিল সৌর জগৎ।কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন কি আগলে রাখতে পারবে লি আর লিরা। কি করবে এখন। নিরাবতা ভেঙে আবার কথা বলে ওঠে কেন্দ্রীয় কম্পিউটার ক্লোরা। আপনাদের হাতে সময় আছে ১৫০ ঘন্টা। তারপর মুখমুখি হতে হবে বিধ্বংসী সকওয়েভের। বেছে নিতে হবে অনিবার্য মৃত্যুর এন্টি সকওয়েভক ফায়ার অথবা হাইপারড্রাইভ।
তারপর বেশ কিছুক্ষন শব্দহীন হয়ে পড়ল মহাকাশযান ফিনিক্স। নৈসর্গিক নিরাবতা আলিঙ্গন করে প্রতি সেকেন্ডে ১০০ আলোকবর্য বেগে ছুটে চলেছে অসিম অন্ধকারে। নিঃসঙ্গ অন্ধকার কেমন আপন ভাবে গ্রাস করে নিচ্ছে মহাবিশ্বের একদল দূর্বল স্বাধীনচেতা প্রাণিদেরকে। নিরাবতা ভেঙে লিরা বল্ল,আচ্ছা ক্লোরা তুমি আগের ৯৮ জনকে সাবধান করনি যে এন্টি সকওয়েভ ফায়ার করলে তাদের অনিবার্য মৃত্যুর কথা।
ক্লোরা সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিল, হ্যা সাবধান তো অবশ্যই করেছি।
কৌতুহলী হয়ে জানতে চাইলো লিরা, ওরা তখন কি বলেছিল?
তাদের সবার একটাই প্রশ্ন ছিল, আমাদের মৃত্যুর পরেও এই ভ্রুন গুলোকে অন্য একটা পৃথিবীতে নিয়ে যাওয়ার অনেক মানুষ থাকবে তাইনা?
আমি হ্যা বল্লে ওরা বলতো তাহলে আমাদের মৃত্যুটা বড় প্রয়োজন। আমাদের অনাগতদের জন্য আমাদের মৃত্যুটা খুব দরকার। তারপর তারা চুপ হয়ে যেত।এ ক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো শীতল ঘরের হিমায়িত ভ্রুন গুলোর দিকে।আমি লক্ষ করেছি তখন সবার চোখ ভরা অশ্রু থাকতো কিন্তু ঠোঁটে থাকতো হাসি। আমার প্রোগ্রামে আছে মানুষ দুঃখ পেলে কাঁদে আর আনন্দে হাসে। কিন্ত আমার এনালাইটিক্যাল কপোট্রন কোন ভাবেই বুঝতে পারেনা মানুষের কোন অনুভূতি প্রকাশের জন্য একই সাথে কান্না হাসির প্রয়োজন হয়।
মুহুর্তকাল চুপ করে থাকে ওরা। ক্লোরা সবুজ পিটপিটে কপোট্রনিক চোখ দিয়ে অবাক হয়ে দেখে যে ওদের দুজনের চোখেই পানি। কি অদ্ভুত! কি অদ্ভুত!
হলোগ্রাফিক স্কিনে পৃথিবীর একটা জিবন্ত চিত্র ভেসে বেড়াচ্ছে। যদিও আজ আর সেই নীল গ্রহটার কোন অস্তিত্ব নেই বিশ্ব মন্ডলে। পৃথিবীর অনেক সৌন্দর্য এভাবে আটকা পড়ে আছে ক্লোরার যান্ত্রিক মনে। হুকুম দিলেই শূন্যস্থানে ভেসে ওঠে হলোগ্রাফিক চিত্র। হলোগ্রাফিক স্কিনে পুরনো পৃথিবীর বসন্ত কালের একটা চলন্ত ছবি ভেসে বেড়াচ্ছে। অলস দৃষ্টতে সেদিকে চেয়ে আছে লি।স্কিনে একটা পাহাড়ি ঝর্ণায় গোসল করছে গোটা আষ্টেক সদ্য আঠার পেরুনো যুবক যুবতী। ঠিক এমন একটা স্মৃতি আছে লির জীবনেও। ঐ যে ছেলেটা ডুবে যাচ্ছে তার পিছু ডুবসাঁতারে আরেকটা কে যেন। হটাৎ তাকে চিনতে পারে লি। স্রোতের টানে ভেসে যাওয়া ছেলেটা ও নিজ।ও প্রবল স্রোতে যখন ভেসে যাচ্ছিল তখন সাতার না জানা মিরা ও লাফিয়ে পড়ে ওকে বাঁচাতে। সে কি প্রবল ঢেউ। ঢক ঢক করে গিলে ফেলেছিল স্বচ্ছ জল। মাথার মধ্যে চক্কর দিয়ে উঠতে চাইছিল বার বার। পাথরের সাথে ধাক্কাতে ধাক্কাতে ডাঙায় ওঠে দুজন। তখনো পুরপুরি সজ্ঞানে ছিল দুজনেই। লির একটা হাত ভেঙেছিল। আর মিরা!ওর লান্স ফেটে রক্ত উঠছিল মুখ দিয়ে। প্রচণ্ড ব্যাথায় কুকড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু ওর চোখে মুখে ছিল আনন্দ।যেন অপ্রত্যাশিত কিছু হটাৎ পেয়ে বসেছে। খুব বেশি কথা বেরোইনি ওর রক্তভেজা মুখ দিয়ে। ভাঙা ভাঙা কন্ঠে বলেছিল ভা–ল–বা–সি। তারপরে আার ভাবতে পারেনা লি। ওর চোখের সামনেই নিথর হয়ে গিয়েছিল মিরা। কাজল আঁকা সুন্দর চোখ দুটো অবর্ণনীয় আনন্দ নিয়ে চেয়ে ছিল ওর দিকে।কিন্তু হলোগ্রাফিক স্কিনে কিভাবে এলো সে দৃশ্য?নিশ্চই ক্লোরা স্কান করেছে ওর নিউরন।ওর স্মৃতিকেই তুলে ধরছে ওর সামনের হলোগ্রাফিক স্কিনে। প্রবল আতঙ্কে চেঁচিয়ে ওঠে লি।প্লিজ স্টপ দিস,বলে চোখ বন্ধ করে নেয় সে।সঙ্গে সঙ্গে ইথারে মিলিয়ে গেল হলোগ্রাফিক স্কিন।মেথিলিনের নরম পর্দা ঠেলে সঙ্গে সঙ্গে ঘরে ঢুকলো লিরা।আতঙ্কিত কন্ঠে বল্ল কি হয়ছে?
সামনে দাঁড়ানো লিরার উদ্বিগ্ন চোখের দিকে তাকিয়ে হটাৎ থমকে গেল লি।ঐ চোখ ওর চেনা।এক শতাব্দীর ও আরো আগের এক জোড়া চেনা চোখ।লির অস্ফুট কন্ঠে বেরিয়ে এলো,মিরা!
লিরা অবাক কন্ঠে বলল, আমি লিরা।কি হয়ছে তোমার?
নিজেকে সামলে নিল লি। পাংশু মুখে হাসি ফুটিয়ে বল্ল,কিছু না।দূঃস্বপ্ন দেখেছি।
লিরা আস্তে আস্তে এগিয়ে এসে বসলো মেথিলিনের খাটে।মলিন বদনে জানতে চাইলো,কিছু কি ভাবলে?
কি ভাববো? পাল্টা প্রশ্ন ছুড়লো লি।
লিরা বললো, শকওয়েভের ব্যাপারে? এই মহাবিশ্বে জিবিত মানুষ বলতে আছি আমরা দুজন। আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে ভেবে চিন্তে। তা না হলে মানুষের অস্তিত্ব হারিয়ে যাবে চিরদিনের মত।শেষের দিকে মেয়েটার কন্ঠটা কেমন ভারি শোনালো।
এক মুহুর্তে কোন কথা বলতে পারেনা লি। নিরাবতা ভাঙলো কেন্দ্রীয় কম্পিউটার ক্লোরা। মহামান্য লি এবং লিরা, এই মাত্র আমাদের মিনিগাল টেলিস্কোপে আশ্চর্য একটা গ্রহের সন্ধান মিলেছে।যার সাথে আমাদের পৃথিবীর কোন পার্থক্য নেই। সূর্যের মত একটা নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরছে।
লি কৌতুহলী কন্ঠে জানতে চাইলো, গ্রহটা আর কতদূরে?
ক্লোরার যান্ত্রিক কন্ঠে ভেসে এলো,৩ বিলিয়ন আলোকবর্য। আমাদের যেতে সময় লাগবে আরো ৩ শ বছর।
দপ করে নিভে গেল ওদের মুখের উজ্জ্বলতা।কাপাকাপা কন্ঠে লিরা বল্ল,সে তো অনেকটা সময়।এরমধ্যে এই ভয়ংকর সকওয়েভের মুখোমুখি হতে হবে অন্ততপক্ষে আরো ১০০ বার।
সম্মতি সূচক শব্দ করল ক্লোরা। আবার নিরাবতা নেমে এলো মহাকাশ জুড়ে।
আচ্ছা ক্লোরা আমরা যদি হাইপারড্রাইভ দিই তবে কতটা সময় সাশ্রয় হবে?বল্ল লি।
সঙ্গে সঙ্গে কথা বল্লনা ক্লোরা। বেশ খানিকটা পরে বল্ল,এক একটা হাইপারড্রাইভে আমরা ১.৭ শত আলোকবর্য অতিক্রম করব। কিন্তু ম্যাগনেটিক রিএ্যাকশনে ০.২ শত আলোকবর্য পেছনে ফিরে আসবো।আমরা যদি সফল ভাবে দুইটা হাইপারড্রাইভ সম্পন্ন করতে পারি তবে মাত্র কয়েক বছরেই পৌছে যাব নতুন পৃথিবীতে। কিন্তু মহামান্য লি,হাইপারড্রাইভে যদি আমরা ত্রিমাতৃক সময়কে অতিক্রম করি তবে অ্যানাইহিলিশন রে ডেস্ট্রয় করে দেবে এই মহাকাশযান। আজো পর্যন্ত একটাও হাইপারড্রাইভ ত্রিমাতৃক জগৎ থেকে ত্রিমাতৃক জগতে দেওয়া সম্ভাব হয়নি।আমাদের হাইপারড্রাইভ সফল ভাবে সম্পদনের সম্ভবনা ০.০০০১ পার্সেন্ট। থামলো ক্লোরা।
লি আবার জিজ্ঞেস করল আর আমরা যদি হাইপারড্রাইভ না দিয়ে এন্টিসকওয়েভ ফায়ারিং করি তবে আমাদের বেচে থাকার সম্ভবনা কতটুকু।
ক্লোরা সঙ্গে সঙ্গে জানালো জিরো পার্সেন্ট। কেননা ফায়ারিং করার সাথে সাথেই ধ্বংশ হয়ে যাবেন আপনারা। আবার নিরাবতা নামলো সমস্ত ঘর জুড়ে। দুজন দুজনের দিকে তাকালো। সে দৃষ্টি প্রাণশূন্য নয়। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে ওরা। হাইপারড্রাইভ দেবে ওরা।
ওদের দুজনের চোখের ভাষা একমুহুর্তে বুঝে নিল ক্লোরা। যান্ত্রিক কন্ঠে বলল, মহামান্য লি হাইপারড্রাইভ দিয়েও আমরা সকওয়েভকে ফাঁকি দিতে পারব কিনা তার নিশ্চয়তা নেই। নতুন পৃথিবীটাও হয়তো ধ্বংশ করে দেবে এই বিধ্বংসী সক ওয়েভ।
এক মুহুর্ত চুপ করে থাকে লি। তারপর দৃঢ় কন্ঠে বলে, তবুও আমরা হাইপারড্রাইভ দেব।
(চলবে….)
-লেখকঃ রোকনুজ্জামান রিপন
(মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ফার্মেসি