ফজরের নামাযের সময় মসজিদে অনেককে দেখা যায়, আযানের জন্য ইকামত দেওয়া হয়ে গেছে অথবা জামাতে নামাজ পড়ানো হচ্ছে, আর তারা সুন্নত নামাজ পড়ছেন। অনেকের স্পর্ধা এতো বেশি যে, মসজিদে এসে দেখে ইমাম সাহেব ফরয নামাজ পড়াচ্ছেন, আর তারা জামায়াতে শরীক না হয়ে আলাদা সুন্নত পড়া শুরু করে?
নামাজ কি নিজের ইচ্ছামতো পড়লে কবুল হবে নাকি, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর তরীকা মোতাবেক পড়লে কবুল হবে?? ফরয নামাজের জন্য ইকামত দেওয়া হয়ে গেলে অন্য কোনো নফল বা সুন্নত নামাজ পড়া সম্পূর্ণ হারাম ও সুন্নত বিরোধী!! রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যখন ইকামত দেওয়া হয়, তখন ফরয ছাড়া অন্য কোন নামাজ নেই”। সহিহ মুসলিম, হাদীস নং- ১৫৩১।
এখন যদি কেউ বলে “আমি হানাফী মাযহাবের আর আমার মাযহাবে আছে ফযরের সুন্নত পড়া যাবে”।
আমি বলবো, আপনি আসল হানাফী মাযহাব অনুসরণ করছেন না, আপনি আসলে “হানাফী মাযহাব” নাম দিয়ে অন্য কারো মাযহাব অনুসরণ করছেন!! কারণ ইমাম আবু হানীফা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, “ইযা সাহহাল হাদীস, ফাহুয়া মাযহাবি” – জেনে রাখো যখন কোনো সহীহ হাদীস পাবে সেইটাই আমার মাযহাব।
এখন, সহীহ হাদীস মোতাবেক ফরয নামাযের জন্য ইকামত দেওয়া হয়ে গেলে আর কোনো সুন্নত নামাজ চলবেনা – সুতরাং ইমাম আবু হানীফার মাযহাবও সেটাই হবে। আর আপনি উলটা কাজ করে “হানাফী মাযহাব” হওয়ার দাবী করবেন, আপনি নিজেই বিবেচনা করুন আপনি কতটুকু সত্যিকারে হানাফী মাযহাব অনুসরণ করছেন? কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে তার জন্য দুঃখিত। আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে সুন্নত জানানো।
আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন নামাযের জন্য ইকামাত দেওয়া হয় তখন ফরয নামাজ ছাড়া অন্য কোন নামাজ নেই। —সহীহ। ইবনু মাজাহ– (১১৫১), মুসলিম।
এ অনুচ্ছেদে ইবনু বুহাইনা, আবদুল্লাহ ইবনু আমর, আবদুল্লাহ ইবনু সারজিস, ইবনু আব্বাস ও আনাস (রাঃ) হতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ আবু হুরাইরার হাদীসটি হাসান। আইউব, ওয়ারাকা ইবনু উমার, যিয়াদ ইবনু সা’দ, ইসমাঈল ইবনু মুসলিম এবং মুহাম্মাদ ইবনু জুহাদা সম্মিলিতভাবে এ হাদীসটি আমর ইবনু দীনার হতে, তিনি আতা হতে, তিনি আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে মারফু’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। হাম্মাদ ইবনু যায়িদ ও সুফিয়ান ইবনু উআইনা তাদের সনদ পরম্পরায় আমর ইবনু দীনার-এর সূত্রে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, কিন্তু তারা মারফু’ হিসাবে বর্ণনা করেননি। তবে মারফু’ হিসাবে বর্ণিত হাদীসটিই আমাদের মতে বেশি সহীহ।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবী ও অন্যান্যরা এ হাদীস অনুসারে আমল করেছেন। তারা বলেছেন, নামাযের জন্য ইকামাত দেওয়া হলে কোন ব্যক্তিই ফরয নামাজ ব্যতীত অন্য কোন নামাজ আদায় করবে না। সুফিয়ান সাওরী, ইবনুল মুবারাক, শাফিঈ, আহমাদ এবং ইসহাকও একই রকম কথা বলেছেন। আরো কয়েকটি সূত্রে আবু হুরাইরার নিকট হতে এ হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। ’আইয়্যাশ ইবনু আব্বাস আবু সালামা হতে তিনি আবু হুরাইরা হতে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
বিঃদ্রঃ অনেকে মনে করেন, ফযরের সুন্নত নামাজ আগে না পড়লে, ফরয বাদে আর পড়া যাবেনা। এধারণাটা ঠিক না!! যদি ফযরের ফরয নামাজের পর ওয়াক্ত থাকে তাহলে সুন্নত পড়া যাবে। আর ওয়াক্ত না থাকলে সূর্য ওঠার পর পড়া যাবে।
কায়েস বিন আ’মর (রাঃ) বলেন, “রাসুলুল্লাহ (সাঃ) (ফযরের নামাযের জন্য) বের হয়ে আসলেন আর ইকামত দেয়া হলো। আমি তাঁর (সাঃ) সাথে ফযরের নামাজ পড়লাম। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নামাজ শেষ করে দেখলেন আমি নামাজ পড়ছি। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে বললেন, ধীরে কায়েস! দুই রাকাত এক সাথেই? আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমি ফযরের আগে দুই রাকাত পড়িনাই। তখন রাসুলুল্লাহ “না, তাহলে পরে ঠিক আছে”। আবু দাউদের বর্ণনায় আছে, “অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নীরব থাকলেন”। সুনানে আত-তিরমিযী ৪২২, আবু দাউদ ১২৬৭।
এই হাদীস থেকে বুঝা যাচ্ছে, ফযরের নামাজের আগে দুই রাকাত সুন্নত নামাজ পড়তে না পারলে, ফরয নামাযের পরেও পড়া যাবে। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) চুপ থাকা মানে তিনি নীরব থেকে কায়েস (রাঃ) কে মৌন সম্মতি দিলেন। আর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর মৌন সম্মতি মানে হলো – সুন্নাহ।
মসজিদে যেকোনো নামাযের আগে লক্ষ্য করবেন কতটুকু সময় বাকি আছে, ২-১ মিনিট সময় যাতে করে অন্তত ২ রাকাত পড়া যাবেনা, তাহলে সুন্নত নামায শুরু করবেন না। সুন্নত পড়া শুরু করবেন যদি এতটুকু সময় হাতে থাকে যে ২ রাকাত শেষ করতে পারবেন। আর কখনো যদি এমন হয় সুন্নত পড়া অবস্থায় ইকামত দেওয়া শুরু করলঠা আপনি ২য় রাকাতে আছেন, একটু সময় নিলেই নামায পূর্ণ করে ফেলতে পারবেন তাহলে দ্রুত নামায পূর্ণ করে সালাম ফেরাবেন। আর যদি ১ম রাকাতে থাকেন তাহলে নামায ছেড়ে দিয়ে জামাতে শরীক হবেন।
আল্লাহ আমাদের জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে কুরআন ও সুন্নাহ মেনে জীবন পরিচালনা করার তোওফিক দান করুন, আমীন ইয়া রাব্বুল আ’লামীন।
লেখক,
শিক্ষার্থী, কামিল (হাদিস), মোমেনশাহী দারুস সুন্নাত কামিল মাদ্রাসা ।