প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী নবাব পারভেজ এর নির্মম মৃত্যু কেবল একটি হত্যাকাণ্ড নয়, এটি আমাদের শিক্ষা দেয় ভুল বোঝাবুঝি এবং অব্যবস্থাপনা কতটা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, ঘটনার সূচনা হয় একেবারে তুচ্ছ একটি বিষয় থেকে। ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সঙ্গে পারভেজ হাসাহাসি করছিলেন। পাশেই বসে থাকা দুই ছাত্রী ভেবে বসেন, ওই হাসাহাসি তাদের নিয়েই। একটি কল্পিত অপমানবোধ থেকে শুরু হয় উত্তেজনা। দুই ছাত্রী বিষয়টি জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর।
প্রক্টর অফিসে ডাকা হয় পারভেজকে। সেখানে সে স্পষ্ট করে জানায় তার হাসাহাসির উদ্দেশ্য কোনোভাবে ওই দুই ছাত্রীকে লক্ষ্য করে ছিল না। বরং, বন্ধুদের ব্যক্তিগত আলাপ নিয়েই মজা করছিলেন তিনি। তবুও পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তাকে ঐ দুই ছাত্রীর কাছে ক্ষমা চাইতে বলা হয়। এবং পারভেজ বিনা দ্বিধায় সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
হ্যাঁ, পারভেজ ক্ষমা চেয়েছিল।
কিন্তু ঘটনা এখানেই থেমে থাকেনি। এরপর থেকেই তার ওপর বাড়তে থাকে চাপ, শুরু হয় হুমকি-ধামকি। শেষ পর্যন্ত, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের মাহাথির হাসান, বিবিএ বিভাগের মেহেরাজ ইসলাম ও এলএলবি বিভাগের আবু জোহর গিফারী পিয়াস তিনজন শিক্ষার্থী বস্তির একটি কিশোর গ্যাং ভাড়া করে আনে পারভেজের ওপর হামলার উদ্দেশ্যে।
২০ এপ্রিল, বিকেল চারটায় ক্যাম্পাসের সামনে ওই গ্যাং সদস্যরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় পারভেজ ও তার আরও চার-পাঁচজন বন্ধুর ওপর। গুরুতর আহত অবস্থায় পারভেজকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ক্যাম্পাসে নেমে আসে শোকের ছায়া।
তদন্তে বেরিয়ে আসে ভয়াবহ তথ্য:
সাইবার টিমের সহায়তায় জানা গেছে, হামলাকারী গ্যাংটির নাম ‘বেনসন গ্যাং’। এই গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছে ব্যানসন নাসিম ওরফে আহমেদ নাসিম। গ্যাংয়ের আরও সদস্যরা হলেন—
• ব্যানসন সাকিব
• ব্যানসন নাদিম
• ব্যানসন নাফিজ
• আহম্মেদ ইউনুস
• আহম্মেদ ইউসুফ
• জয়ান ব্রো (বর্তমানে বিদেশে অবস্থানরত)
সন্দেহভাজন ইউনুসের মোবাইল নম্বর ০১৯২৭-৮৩৪১৯৪, যা ট্র্যাক করলে গ্যাং সদস্যদের অবস্থান নির্ধারণ করা সম্ভব হবে বলে ধারণা তদন্তকারীদের।
এছাড়াও, এ ঘটনার নেপথ্যে সহায়তাকারী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন ফাতেমা তাহসিন ঐশী, যিনি অভিযুক্ত পিয়াসের প্রেমিকা। তিনি ইউনিভার্সিটি অফ স্কলার্সের বিবিএ বিভাগের ৩য় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী।
একটি জীবন শেষ হয়ে গেল, একটি হাসির প্রতিধ্বনি থেমে গেল শুধুমাত্র একপেশে ধ্যানধারণা, ভুল বোঝাবুঝি এবং প্রতিহিংসার বলি হয়ে।
শিক্ষার্থীরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানিয়েছেন। বিষয়টি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহলে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে এবং তদন্ত চলমান রয়েছে।
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
নবাব পারভেজের মৃত্যুতে শুধু একটি পরিবার নয়, পুরো বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার আজ শোকে মুহ্যমান।
(সামগ্রিক তথ্য সহায়তায় PUSAB)






