Tuesday, March 18, 2025
হোমপ্রচ্ছদ রচনাজুলাই বিপ্লব- শহীদি ঈদ্গাহ 

জুলাই বিপ্লব- শহীদি ঈদ্গাহ 

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে জুলাই বিপ্লব একটি গভীর এবং রক্তক্ষয়ী বিপ্লব হিসেবে উন্মোচিত হয়েছে, যা জাতির গতিপথে একটি স্পষ্ট আর গভীর পরিবর্তন চিহ্নিত করেছে। স্বৈরাচার রক্তপিপাসু শেখ হাসিনার অত্যাচারী স্টিমরোলার শাসনামলে দীর্ঘদিন ধরে দমন করা জনগণের কণ্ঠ হঠাৎ বিস্ফারিত হয়ে রাষ্ট্রকে মেরামতের জন্য একটি শক্তিশালী ও অপ্রতিরোধ্য আন্দোলনে পরিণত হয়েছিল। 

দেড় দশকেরও বেশি সময়ের গুম, খুন, মিথ্যে মামলার হতাশা এবং অন্যায়ের দ্বারা উজ্জীবিত, মহাকাব্যিক অনুপাতের একটি বিদ্রোহে পরিণত হয়েছিল। এই বিপ্লব তার ভারী নজরানা দিয়েছিলো ১০০০ এরও বেশি সাহসী আত্মা, যার একটা উল্লেখযোগ্য অংশ গুম করে ফেলা হয়েছে, গণকবর দেয়া হয়েছে, বেওয়ারিশ হিসেবে, চূড়ান্ত নির্মমতা হিসেবে শহিদদের লাশকে একসাথে স্তূপ করে পেট্রল ঢেলে জ্বালিয়ে দিয়েছে পিশাচ পুলিশ এবং আওয়ামিলীগ ছাত্রলীগের নরখাদকরা।

এই অভ্যুত্থান দেখেছে কিভাবে শিক্ষার্থী আর সাধারণ জনতা সীসাঢালা প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে শহীদ হয়েছিল অকাতরে, শেষ দিকে নৃশংস খুনি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালকে দেয়া খুনি পুলিশের ভাষ্যে ‘একজন মরলে একজনই যায়, উপস্থিতি সংখ্যা আরও বাড়ে’, যার ফলে দশ হাজারেরও বেশি গুলিবিদ্ধ ও আহত হয়েছিল এবং প্রায় এগারো হাজার জন অন্যায়ভাবে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিল। ডিবির গুমের শিকার অজস্র মানুষ। তবুও, অপ্রতিরোধ্য রাষ্ট্রীয় সহিংসতা সত্ত্বেও, সাধারণ বাংলাদেশি ছাত্র জনতার সাহস শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হয়েছে, জনগণের জন্য একটি ঐতিহাসিক বিজয় এনেছে।

এই বিজয় শুধু কর্তৃত্ববাদের পরাজয়ের চেয়ে বেশি; এটি জাতির ভবিষ্যত পুনরুদ্ধার করছে। এটি একটি নতুন যুগের সূচনাকে চিহ্নিত করে, যেখানে ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র এবং সাম্যের আদর্শগুলি আর ফাঁপা প্রতিশ্রুতি নয় বরং বাস্তব লক্ষ্যগুলি নাগালের মধ্যে রয়েছে। এই সংগ্রামের সময়ের ত্যাগ যেন বৃথা যায় না; এই ত্যাগ যেন সেই ভিত্তি তৈরি করে যার উপর বাংলাদেশের নিগূঢ় ভবিষ্যত গড়ে উঠবে—একটি ভবিষ্যত যা সকলের জন্য ন্যায়পরায়ণতা, স্বাধীনতা এবং মর্যাদার মূল্যবোধে নিহিত।

এই বিজয়ের কেন্দ্রবিন্দু হল দেশের জন্য একটি সাহসী আর নতুন দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ, বাকস্বাধীনতা, বুদ্ধির চিন্তার স্বাধীনতা, ধর্মের স্বাধীনতা যা বিপ্লবীদের দ্বারা তৈরি একটি বিশদ স্মারকলিপি। যেই স্বাধীনতায় কেউ ইসলামের বিধান পালন করলে তাকে ট্যাগ দিয়ে নির্যাতন করেনা। এটি একটি জাতির আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করে যা অত্যাচারের কবল থেকে মুক্ত হয়ে ন্যায়সঙ্গত সমাজের দিকে অগ্রসর হতে প্রস্তুত। পাশাপাশি যেই স্বাধীনতা রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে উন্মুক্ত বাতাসে ঘুরতে দেয়, শুধুমাত্র বিরোধী দল হবার জন্য নির্বিচারে গণহত্যা চালায়না। পাশাপাশি এটি স্বৈরাচারের সেই কাঠামোগুলিকে ভেঙে ফেলার লক্ষ্য; যা দুর্নীতি, অসমতা এবং কর্তৃত্ববাদকে বিকাশ লাভ করতে দেয়।

এই সংস্কারগুলির কেন্দ্রস্থলে রয়েছে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং আইনের শাসনের প্রতি দৃঢ় প্রতিশ্রুতি। বিপ্লব উদীয়মান নেতৃত্বের মধ্যে দায়িত্বের একটি নতুন বোধ জাগিয়েছে, যার দায়িত্ব ছিল অর্থবহ ও স্থায়ী পরিবর্তনের মাধ্যমে শহীদদের আত্মত্যাগকে সম্মানিত করা। এটি কেবল পুনর্নির্মাণের সময় নয়, এই ধরনের নিপীড়নকে আর কখনও শিকড় দেওয়া থেকে রোধ করার জন্য দেশের প্রতিষ্ঠানগুলিকে মৌলিকভাবে পুনর্বিবেচনা এবং পুনর্নির্মাণ করার। বিপ্লব একটি ব্যাপক রূপান্তরের অনুঘটক হিসেবে কাজ করে, যাতে অতীতের সংগ্রামের পুনরাবৃত্তি না হয়।

বাংলাদেশ যতই এগিয়ে যাচ্ছে, এই বিপ্লবের কষ্টার্জিত প্রজ্ঞা দিয়েই তা করছে। বিজয় শেষ নয় নতুন অধ্যায়ের সূচনা। সংস্কার ও ন্যায়বিচারের উপর জোর দিয়ে, পথপ্রদর্শনকারী আলো হিসেবে এই অভ্যুত্থান কাজ করবে ততক্ষণ, যতক্ষণ জাতি একটি ভবিষ্যতের দিকে তার পথ নির্ধারণ করে চলবে। যা সমস্ত বাংলাদেশীদের জন্য আরও সুন্দর, মুক্ত এবং আরও সমৃদ্ধ। এটিই বিপ্লবের উত্তরাধিকার—একটি ভবিষ্যৎ যা আত্মত্যাগে নির্মিত জাগ্রত জনতার, মেশিনগান আর স্নাইপারের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়া সাহসের দ্বারা আকৃতির, এবং শহীদদের মতো ন্যায় ও সাম্যের পথে পরিচালিত। আহাদ, রিয়া, সামির, হোসাইন, মোবারক, তাহমিদ, ইফাত ও নাঈমা নামের ফুলের মতো শিশুগুলো সবে ফুটছিল। তবে আর বিকশিত হতে পারেনি। বুলেটের আঘাতে ছোট্ট জীবনগুলো ঝরে গেছে কুঁড়িতেই। বাবার কোলের মতো নিরাপদ আশ্রয়েও তাদের আঘাত করেছে ঘাতক বুলেট। আবার কারফিউ মেনে ঘরের কোণে থেকেও কারও জীবনসৌরভ মুছে গেছে বারুদের গন্ধে। মা-বাবার মাঝ থেকেই প্রাণ কাড়ল বুলেট। চার বছরের আবদুল আহাদের মৃত্যু পাষাণকেও কাঁদাচ্ছে। যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ এলাকায় ১১ তলা একটি বাড়ির আট তলার ভাড়া বাসায় থাকে তার পরিবার। ১৯ জুলাই বিকেলে পরিবারের সবাই বাসায় ছিলেন। সে সময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ চলছিল। কী হচ্ছে দেখতে আর সবার মতো উৎসুক হয়ে ছোট্ট আহাদও বারান্দায় গিয়েছিল। এক পাশে ছিল বাবা, অন্য পাশে মা। হঠাৎ ঘাতক বুলেট তার ডান চোখে লাগলে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে শিশুটি। কোটা সংস্কার আন্দোলন ও আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ছাত্র–জনতার বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিসহ বিভিন্ন ধরনের সহিংসতায় সারা দেশে কমপক্ষে ৭০ শিশু–কিশোর নিহত হয়েছে। তাদের বেশির ভাগ, অর্থাৎ ৬০ জনের মরদেহে গুলির ক্ষতচিহ্ন ছিল। দগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৯ কিশোরের।প্রথম আলোর হিসাব অনুযায়ী, ১৬ জুলাই থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত ৬২৬ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৬ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত নিহত হন কমপক্ষে ৩৫৪ জন। আর ৫ থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত আরও অন্তত ২৭২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

সরকার শহীদদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা নিয়ে কাজ করছে, দীর্ঘ এক মাসেও যেটা সম্পূর্ণ হতে পারে নাই সুযোগসন্ধানী কিছু কুচক্রীদের টানা আন্দোলন আন্দোলন খেলায়। বেসরকারি মাধ্যমে উঠে আসা তালিকা থেকে কয়েকজনকে নিয়ে সাজিয়েছি আজকের এই তালিকা।

আমাদের উদ্দেশ্য শহীদদেরকে চর্চা করা, যেটা আমরা জারি রাখবো, আমাদের শহীদেরা সদা জাগ্রত, চির সবুজ, অনন্ত আলো। তারা আমাদের পথপ্রদর্শক, স্বাধীনতার কান্ডারী। যে পথে আমাদের শহীদেরা হেঁটেছেন, আমরা সেই পথেই সুদৃঢ় হয়ে মার্চ করে যাবো। তারা যেই ডাকের নকীব, আমরা সেই আজানের মুসল্লী। 

নিচে কয়েকজন বীরের আত্মত্যাগ নিয়ে আলোচনা করছি, আগেই বলে নিচ্ছি আমরা অসম্পূর্ণ তালিকা নিয়ে কাজ করছি, রাষ্ট্র এবং গণমাধ্যম এখনো সবার পূর্ণাঙ্গ ডিটেইলস একত্রিত করতে পারেনি। 

শাকিল পারভেজ

শিক্ষার্থী- মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

মৃত্যু তারিখ : ১৮ জুলাই, ২০২৪

বয়স : ———-

জন্ম তারিখ : ———-

জন্মস্থান : গাজীপুর, ঢাকা

যেভাবে শহীদ হয়েছেন :

উত্তরায় বিনা উস্কানিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে পুলিশ ও ছাত্রলীগ। এ সময় উভয়পক্ষে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংঘর্ষের এক পর্যায়ে পুলিশ সমঝোতার জন্য পুলিশ তাকে ডেকে নিয়ে যায়। কাছে গেলে পুলিশ খুব কাছে থেকে শাকিলের পেটে গুলি করে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে বাংলাদেশ মেডিকেলে নেওয়া হয়। সেখানে ডাক্তার শাকিলকে মৃত ঘোষণা করেন।

ব্যক্তিগত জীবন :

শাকিল পারভেজের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের লাকস্মিপুর উপজেলার খাপিলাটুলি গ্রামে। তিনি মো. বেলায়েত হোসাইন ও পারভীন বেগম দম্পতির ছেলে।

আব্দুল্লাহ আল তাহির

গ্রাফিক্স ডিজাইনার- সৃজন গ্রাফিক্স প্রিন্টার্স, সিরাজ মার্কেট রোড, উত্তরা, ঢাকা

মৃত্যু তারিখ : ১৮ জুলাই, ২০২৪

বয়স : ২৮ বছর

জন্ম তারিখ : ———-

জন্মস্থান : রংপুর

যেভাবে শহীদ হয়েছেন :

গত ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে রংপুর সিটি বাজার মার্কেট সংলগ্ন রাজা রামমোহন মার্কেটের সামনে পুলিশের নির্বিচার গুলিতে শাহাদাত বরণ করেছেন। 

ব্যক্তিগত জীবন :

আব্দুল্লাহ আল তাহির এর ব্যক্তিগত তথ্য খোঁজার কাজ চলমান। আপনার কাছে উনার সম্পর্কে তথ্য থাকলে, আমাদের দিয়ে সাহায্য করুন।

নাছিমা আক্তার

মৃত্যু তারিখ : ২০ জুলাই, ২০২৪

বয়স : ২৩ বছর

জন্ম তারিখ : ———-

জন্মস্থান : নোয়াখালী

যেভাবে শহীদ হয়েছেন :

১৯ জুলাই, দুই ভাতিজাকে নিয়ে বিকালে ছাদে খেলতে গিয়ে হেলিকপ্টারের গুলিতে শহীদ হন।

ব্যক্তিগত জীবন :

নাছিমা আক্তার এর ব্যক্তিগত তথ্য খোঁজার কাজ চলমান। আপনার কাছে উনার সম্পর্কে তথ্য থাকলে, আমাদের দিয়ে সাহায্য করুন।

নাইমা সুলতানা

শিক্ষার্থীমাইলস্টোন স্কুল

মৃত্যু তারিখ : ১৯ জুলাই, ২০২৪

বয়স : ১৫ বছর

জন্ম তারিখ : ———-

জন্মস্থান : আমুয়াকান্দা, মতলব উত্তর, চাঁদপুর

যেভাবে শহীদ হয়েছেন :

১৯ জুলাই শুক্রবার রাজধানী ঢাকার উত্তরার ৫ নম্বর সড়কে ভাড়া বাসার চারতলার বারান্দায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাঈমা। – সূত্র: প্রথম আলো

ব্যক্তিগত জীবন :

উপজেলার আমুয়াকান্দা গ্রামের হ্যোমিও চিকিৎসক গোলাম মোস্তফা ও গৃহবধূ আইনুন্নাহার বেগমের মেয়ে। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সে মেজ। তাঁর বড় বোন তাসফিয়া সুলতানা ঢাকার মাইলস্টোন কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ভাই আবদুর রহমান ঢাকার উত্তরা এলাকায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে। আইনুন্নাহার বেগম তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে ঢাকার উত্তরার ৫ নম্বর সড়কের একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। গোলাম মোস্তফা গ্রামের বাড়িতে থাকেন। তিনি মতলব দক্ষিণ উপজেলার নারায়ণপুর বাজারে হ্যোমিও চিকিৎসা দেন।

ইফাত হাসান

শিক্ষার্থীএ কে স্কুল অ্যান্ড কলেজ, দনিয়া, ঢাকা

মৃত্যু তারিখ : ২০ জুলাই, ২০২৪

বয়স : ১৬ বছর

জন্ম তারিখ : ———-

জন্মস্থান : নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার রাজগঞ্জ ইউনিয়নের মনপুরা গ্রামে

যেভাবে শহীদ হয়েছেন : গত শনিবার (২০ জুলাই) রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে কোটা সংস্কার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাঁধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও গুলি ছোড়ে পুলিশ। সেখানে এক ব্যাক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে থাকেন।

ইফাত হাসান তাকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে এগিয়ে গিয়ে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। বিষয়টি দেখে ওই হাসপাতাল থেকে সন্ত্রাসীবাহিনী ইফাতকে টেনে বের করে নিয়ে বুকে গুলি করে। গুলি হাতের কব্জি ভেদ করে বুকের বাম পাজরে ঢুকে যায়। প্রচুর রক্তক্ষরনে সেখানেই শহীদ হন।- সূত্র: প্রথম আলো

মায়ের অভিব্যাক্তঃ

কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিহত ইফাতের মা বলেন, ‘আমার ছেলে অনেকবার পুলিশকে বলেছে, আঙ্কেল এই এলাকায় জীবনেও আসবো না, আমাকে ছেড়ে দেন, কিন্তু পুলিশ শোনেনি। তারা আমার ছেলেকে মেরে রাস্তায় ফেলে চলে গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শনিবার দুপুর আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে ঘুম ভাঙে ইফাতের। হাতমুখ ধুয়ে দুপুরে বাসার বাহিরে যেতে তৈরি হতে দেখে ইফাতকে বাইরে যেতে নিষেধ করি। কিন্তু একটু পরেই চলে আসবে বলে বেরিয়ে যায় ইফাত। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ ইফাতের কয়েকজন বন্ধু তার মরদেহ বাসায় নিয়ে আসেন।

তিনি বলেন, আমার ছেলের কোনো অপরাধ ছিল না। একটা অসহায় মানুষকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়াই কি তার অপরাধ? এ কারণেই আমার ছেলেকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে?

মো: সাজ্জাত হোসেন সজল

শিক্ষার্থী- সিটি ইউনিভার্সিটি

মৃত্যু তারিখ : ৬ আগস্ট, ২০২৪

বয়স : ২০ বছর

জন্ম তারিখ : ———-

জন্মস্থান : শ্যামপুর, শাঘাটা, গাইবান্ধা

যেভাবে শহীদ হয়েছেন :

সজল বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে ছিলেন শুরু থেকেই এবং গত সোমবার বরাবরের মতো যোগ দিয়ে বাইপেল , সাভার থেকে তার আরো ২-৩ টা ফ্রেন্ড এর সাথে থাকা অবস্থায় হঠাৎ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয় তার দুই বন্ধু সেখান থেকে সরে আসলেও সজল সাহসীকতার সাথে বলে উঠে কর গুলি কর ,এক পর্যায়ে সে গুলিবিদ্ধ হয় , এবং পুলিশের গাড়িতে উঠানো হয় , হটাৎ সেই গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়,বের হতে না পেরে সজল সহ বেশ কয়েকজনের শরীর এর অর্ধেক অংশ পুরে কয়লা হয়ে যায়।

ব্যক্তিগত জীবন :

সাজ্জাত হোসেন সজল, পিতা: মোঃ খলিলুর রহমান, মাতা: মোছাঃ শাহিনা বেগম, এর একমাত্র পুত্র সন্তান বিসিআই স্কুল এন্ড কলেজের সাইন্স বিভাগ থেকে ২০২২ সম্মান এর সাথে উত্তির্ণ হয়ে আশুলিয়া সিটি ইউনিভার্সিটি তে ৫৫তম টেক্সটাইল ডিপার্টমেন্ট এর ছাত্র ছিলেন ।

আসিফ হাসান

শিক্ষার্থী নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ

মৃত্যু তারিখ : ১৮ জুলাই, ২০২৪। বয়স : ২১ বছর

জন্ম তারিখ : ———-

জন্মস্থান : আস্কারপুর, দেবহাটা, সাতক্ষীরা

যেভাবে শহীদ হয়েছেন :

১৮ জুলাই ঢাকার উত্তরায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিতে মারাত্মক আহত হন আসিফ হাসান। দুপুর ১২টার দিকে তাঁকে উত্তরা আধুনিক মেডিকেলে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ব্যক্তিগত জীবন :

আসিফ -রাকিব নামে যমজ ভাই ও তিন বোনের মাঝে বেড়ে ওঠেন। যমজ ভাই রাকিবকে ফেলে চলে গেলেন আসিফ। রাকিব সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে অনার্স পড়ছেন।

মো. সেলিম তালুকদার

মার্চেন্ডাইজিং অ্যাসিস্ট্যান্টমেট্রো নিটিং অ্যান্ড ডাইং মিলস লিমিটেড (প্রাক্তন বিইউএফটি শিক্ষার্থী)

মৃত্যু তারিখ : ৩১ জুলাই, ২০২৪

বয়স : ৩২ বছর

জন্ম তারিখ : ———-

জন্মস্থান : মল্লিকপুর, নলছিটি, ঝালকাঠির

যেভাবে শহীদ হয়েছেন :

ঘটনার দিন তিনি বাসা থেকে অফিসের উদ্দেশ রওনা দিয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছালে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। এ সময়  মাথায়, বুকে ও পিঠে গুলি লাগে তার। ফুসফুসেও লাগে গুলি। চার হাসপাতাল ঘুরে শেষে  ধানমণ্ডির পপুলারে ভর্তি করা হয় সেলিমকে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে।

ব্যক্তিগত জীবন :

তিন বোন আর এক ভাইয়ের মধ্যে সেলিম ছিলেন মেজো। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। গত বছর ৪ আগস্ট বিয়ে করেন সুমি আক্তারকে। সেলিম তালুকদারের মৃত্যুর তিনদিন পর কুলখানির আয়োজন করা হয়। সেদিনই ছিল তাদের প্রথম বিবাহবার্ষিকী।কুলখানি অনুষ্ঠানের দিন সেলিমের স্ত্রী অসুস্থ হন। ৫ আগস্ট চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে জানা যায়, সুমি আক্তার চার সপ্তাহ ছয়দিনের অন্তঃসত্ত্বা।

আকরাম খান রাব্বি

শিক্ষার্থী ও পার্ট-টাইম কর্মচারী

মৃত্যু তারিখ : ১৯ জুলাই, ২০২৪

বয়স : ২৯ বছর

জন্ম তারিখ : ———-

জন্মস্থান : মিরপুর-১৩, ঢাকা-১২১৬

যেভাবে শহীদ হয়েছেন :

মিরপুর-১০, শহীদ আবু তালেব উচ্চ বিদ্যালয় এর সামনে থেকে হামলার শিকার হয় পুলিশ কর্তৃক, ২ টি গুলি লাগে ( ১টি হাতের কব্জিতে এবং ১টি পেটে) যার কারনে অনেক রক্ত খরন হয় হাসপাতাল নিতে নিতে ইন্তেকাল করেন।

ব্যক্তিগত জীবন :

আকরাম খান রাব্বি এর ব্যক্তিগত তথ্য খোঁজার কাজ চলমান। আপনার কাছে উনার সম্পর্কে তথ্য থাকলে, আমাদের দিয়ে সাহায্য করুন।

মোঃ আহনাফ আবীর আশরাফুল্লাহ

শিক্ষার্থীঃ মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

মৃত্যু তারিখ : ৫ আগস্ট, ২০২৪

বয়স : ২৯ বছর

জন্ম তারিখ : ———-

জন্মস্থান : বারপাখিয়া,দেলদুয়ার,টাংগাইল

যেভাবে শহীদ হয়েছেন :

গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের দাবিতে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় পুলিশের নির্বিচার গণহত্যায় নিহত হন আহনাফ আবীর আশরাফুল্লাহ। তিনি মানারাত ইউনিভার্সিটির ইইই বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র নিহত ছিলেন। সেদিন মোট ৪৬ জনকে গুলি করে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে দেওয়া হয়।  গুলিবিদ্ধ লাশগুলো পুলিশ সদস্য ময়লার বস্তার মতো করে ভ্যানে তোলেন। থানার পাশে পুলিশের একটি গাড়িতে পেট্রোল দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে তাদের লাশ পুড়িয়ে দিয়ে গণহত্যার নির্মম ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন।

ব্যক্তিগত জীবন :

আহনাফ টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার বারপাখিয়া গ্রামের হারুনুর রশিদের ছেলে। তিনি ছিলেন একমাত্র ছেলেসন্তান। আশরাফুল্লাহ পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করে নিজের ও সংসারের খরচ চালাতেন। তিন বোনের মধ্যে দুই বোনের বিয়েও দিয়েছেন তিনি। 

মাওলানা খুবাইব বিন আব্দুর রহমান

শিক্ষকজামিয়া ইসলামিয়া ইব্রাহীমিয়া ইসহাকিয়া কাজলারপার বড় মাদ্রাসা,যাত্রাবাড়ী,ঢাকা/

মৃত্যু তারিখ : ৫ আগস্ট, ২০২৪

বয়স : ২৪ বছর

জন্ম তারিখ : ———-

জন্মস্থান : উজানী,কচুয়া,চাঁদপুর

যেভাবে শহীদ হয়েছেন :

যাত্রাবাড়ী থানার সামনে – যাত্রাবাড়ী বড় মাদরাসার স্পটে পুলিশ সাদা পাঞ্জাবি টুপি পরিহিত একজন হুজুরকে লাঠি’চার্জ করে, তারপর দৌড় দিতে বলে। ছেলেটা কিছুদূর দৌড়াতেই পিছন থেকে পুলিশ গু’লি করে। এবং ছেলে টি মাটিতে লু’টিয়ে পড়ে যায়। সেই ছেলেটিই খোবাইব।

ব্যক্তিগত জীবন :

মাওলানা খুবাইব বিন আব্দুর রহমান এর পিতা শহীদের গর্বিত পিতা আল্লামা আব্দুর রহমান সাহেব। 

আবদুল মোতালেব

শিক্ষার্থী- মনেশ্বর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়

মৃত্যু তারিখ : ৪ আগস্ট, ২০২৪

বয়স : ১৪ বছর

জন্ম তারিখ : ———-

জন্মস্থান : ঢাকা

যেভাবে শহীদ হয়েছেন :

মোতালেব ০৪ আগস্ট বিকেল বেলা বাসায় না বলে বাসা থেকে বের হয়ে যায় এবং জিগাতলা ছাত্রদের সাথে ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেয়। এসময় দূর্বৃত্যকারীরা গোলাগুলি শুরু করলে সবাই দৌড়াদৌড়ি শুরু করে সরে আসতে পারলে ও মোতালেব সরে আসতে পারে না। দূর্বৃত্যকারীরা তাকে উদ্দেশ্য করে বুকের মধ্যে ৪-৫ টি গুলি করে। এরপর তাকে রাস্তার অবস্থান করা লোকেরা শিকদার মেডিকেল কলেজ এ নিয়ে যায়। শেখান থেকে অনেকক্ষণ চিকিৎসা দেয়ার পর ডাক্তার রা তাকে মৃত ঘোষণা করেন । এসময় তার পরিবার এর খোঁজ না পেয়ে যারা হাসপাতাল এ নিয়ে ছিলেন তারা তাকে শেষ চিকিৎসা দেয়ার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ নিয়ে যেতে নিলেও নিয়ে যেতে পারে না । এবং তার লাশ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এ নিয়ে যায়। শহীদ মিনার এ সন্ধ্যায় থাকা দুইটি লাশ এর মধ্যে একটি ছিল মোতালেব এর লাশ ছিল । এদিকে পরিবার এর লোকজন এর কাছে খবর আসে এবং তারা শিকদার মেডিকেল এ যেয়ে তাকে খোঁজ করলে ও তারা বলেন তাকে ঢাকা মেডিকেল এ পাঠানো হয়েছে । ঢাকা মেডিকেল এ ও তার কোনো খোঁজ না পেয়ে তার পরিবার পাগল এর মতো তাকে খুজতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত তার লাশ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে পাওয়া যায় । পরবর্তীতে তার লাশ বাসায় আনা হয় এবং জানাযাহ্ অনুষ্ঠিত হয় এবং নোয়াখালী তে তাদের নিজ বাসায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে দাফন করা হয়।

ব্যক্তিগত জীবন :

শহীদ আব্দুল মোতালেব ডাকনাম : মুন্না, পিতার নাম : আব্দুল মতিন, মাতার নাম : জাহানারা বেগম বয়স : ১৪ বছর, স্কুল: মনেশ্বর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় শ্রেনী: ৮ম বর্তমান ঠিকানা : ৬৩/এ গজমহল , হাজারীবাগ , স্থায়ী ঠিকানা : বড় নেওয়াজপুর , মিরেরপাড়া , বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী।

ইরফান ভূঁইয়া

শিক্ষার্থীইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা

মৃত্যু তারিখ : ১৯ জুলাই, ২০২৪ 

বয়স : ———-

জন্ম তারিখ : ———-

জন্মস্থান : নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা

যেভাবে শহীদ হয়েছেন :

১৮ জুলাই রাজধানীর যাত্রাবাড়ি এলাকায় পুলিশের এলোপাথাড়ি গুলিতে তিনি শহীদ হন।

ব্যক্তিগত জীবন :

ইরফান ভূঁইয়া এর ব্যক্তিগত তথ্য খোঁজার কাজ চলমান। আপনার কাছে উনার সম্পর্কে তথ্য থাকলে, আমাদের দিয়ে সাহায্য করুন।

মোঃ জাহিদুল ইসলাম

শিক্ষার্থী-পাবনা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট

মৃত্যু তারিখ : ৪ আগস্ট, ২০২৪

বয়স : ১৯ বছর

জন্ম তারিখ : ———-

জন্মস্থান : চর বলরামপুর, দোগাছী, পাবনা

যেভাবে শহীদ হয়েছেন :

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পাবনায় গত ৪ আগস্ট গুলিতে নিহত হন দুই শিক্ষার্থী। তাঁদের মধ্যে একজন উনিশ বছরের তরুণ জাহিদুল ইসলাম।জাহিদের বড় ভাই তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘যখন সমাবেশে গুলি বর্ষণ শুরু হয় তখন আমি জাহিদের কাছ থেকে ২-৩ মিটার দূরে ছিলাম। হুড়োহুড়িতে প্রথমে বুঝতে পারিনি। কিছু সময় পর অন্য ছাত্রদের মাধ্যমে জানতে পারি আমার ভাই জাহিদের গুলি লাগছে এবং সে হাসপাতালে মারা গেছে। পড়াশোনা শেষ করে উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার কথা ছিল জাহিদের।

ব্যক্তিগত জীবন :

পাবনা সদর উপজেলার চর বলরামপুর গ্রামের দুলাল উদ্দিন ও আফিয়া খাতুন দম্পতির সন্তান জাহিদুল ইসলাম। পাবনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রনিকস বিভাগের ৬ষ্ঠ সেমিস্টারের ছাত্র ছিলেন তিনি। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে তৃতীয় ছিলেন জাহিদ। তাঁর বাবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, মা গৃহিণী। 

রাসেল মাহমুদ

শিক্ষার্থী- সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়,ঢাকা

মৃত্যু তারিখ : ৫ আগস্ট, ২০২৪

বয়স : ২১ বছর

জন্ম তারিখ : ———-

জন্মস্থান : চরশিবা, গলাচিপা, পটুয়াখালী

যেভাবে শহীদ হয়েছেন : শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর সোমবার শনির আখড়া থেকে একটি আনন্দ মিছিল বের করে সাধারণ মানুষ। সেখান থেকে মিছিলটি শাহবাগের উদ্দেশে রওনা হয়। এই আনন্দ মিছিলটি যাত্রাবাড়ী অতিক্রম করা কালে হঠাৎ গুলি শুরু করে যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ। এতে সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী রাসেল মাহমুদ গুলিবিদ্ধ হন। উপস্থিত জনতা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এরপর থেকেই রাসেলের খোঁজ পাচ্ছিল না পরিবার ও বন্ধুরা। জানা যায়, মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। সোমবার বিকেল থেকেই বিভিন্ন হাসপাতালে তাকে খোঁজা হলেও পাওয়া যাচ্ছিল না। পরবর্তীতে তিন সহপাঠী মঙ্গলবার সকালে তার লাশ শনাক্ত করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করার ব্যাবস্থা করে। রাসেলের সহপাঠি তানজিদা খানম মিল্কি জানান, আমরা বিকেল থেকেই রাসেলের খোঁজ পাচ্ছিলাম না। তারপর রাজধানীর কয়েকটি হাসপাতালে খোঁজাখুঁজি করি। কয়েকবার ঢাকা মেডিকেলেও গিয়ে খোঁজ পাইনি। এরপর আজ সকালে রাসেলের সন্ধান পাই ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে।

ব্যক্তিগত জীবন :

রাসেল মাহমুদ এর ব্যক্তিগত তথ্য খোঁজার কাজ চলমান। আপনার কাছে উনার সম্পর্কে তথ্য থাকলে, আমাদের দিয়ে সাহায্য করুন।

আসিফ ইকবাল

শিক্ষার্থী-ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ, ঢাকা

মৃত্যু তারিখ : ১৮ জুলাই, ২০২৪

বয়স : ৩১ বছর 

জন্ম তারিখ : ———-

জন্মস্থান : মাগুরা, খুলনা

যেভাবে শহীদ হয়েছেন :

১৯ জুলাই ছাত্র আন্দোলন চলাকালে নগরীর মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় বন্দুকযুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন। তার বয়স হয়েছিল ২৯ বছর। আন্দোলনে তার সঙ্গী ছিলেন তার মামাতো ভাই মো. রাশিদুল হাসান। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে রাশিদুল বলেন, ১৯ জুলাই (শুক্রবার) তারা শেখপাড়া এলাকার বায়তুল দারার মসজিদে একসঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করেন। তিনি আরো বলেন, মিরপুর-১০ মোড়ের দিকে যাওয়ার সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। আসিফ এক পর্যায়ে বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিলে আমরা একটি শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হই। তখন আ. লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিরপুর ১০ মেট্রো স্টেশনের দিকে হটে যেতে বাধ্য হয়। এ সময় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা ও ক্ষমতাসীন দলের লোকজন নির্বিচারে গুলি চালায়। নিরাপদ স্থানের খোঁজে ফুটপাতের একটি দোকানের পাশে লুকানোর চেষ্টা করেন আসিফ। তিনি বলেন, ‘এর পরপরই আমরা সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে দিকে গুলির শব্দ শুনতে পাই এবং আসিফকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দেখতে পাই।’ রাশিদুল জানান, ৭.৬২ মিলিমিটার বুলেটের আঘাতে হার্টের ডান পাশের প্রধান ধমনী ছিঁড়ে যাওয়ায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে আসিফের মৃত্যু হয়। একজন গোলাবারুদ বিশেষজ্ঞের ব্যাখ্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি একটি দক্ষ স্নাইপারের কাজ এবং কমপক্ষে ৩০০-৪০০ মিটার দূর থেকে তাকে টার্গেট করে গুলি চালানো হয়েছিল।

ব্যক্তিগত জীবন :

আসিফ ইকবাল এর বাবার নাম এম এ রাজ্জাক, সে এক ভাই ও এক বোনের পরিবারে বেড়ে ওঠেন, এখন স্ত্রী রয়েছেন তার পরিবারের সাথে। তিনি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন, চ্ছিলেন বিভিন্ন সামাজিক কাজের অংশ, করতেন নিয়মিত রক্তদান। 

সাফকাত সামির

শিক্ষার্থীপঞ্চম শ্রেণি, মাদ্রাসা

মৃত্যু তারিখ : ১৯ জুলাই, ২০২৪

বয়স : ১১ বছর

জন্ম তারিখ : ———-

জন্মস্থান : ———-

যেভাবে শহীদ হয়েছেন :

জানালার পাশেই সামিরের পড়ার টেবিল। পড়ার বই, প্লাস্টিকের খেলনা, ঘরের মেঝেতে এখনো ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। গত শুক্রবার জানালা দিয়ে আসা একটি বুলেট সামিরের চোখ দিয়ে ঢুকে মাথার খুলি ভেদ করে বেরিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে ১১ বছরের সাফকাত সামির। – প্রথম আলো

ব্যক্তিগত জীবন :

সাফকাত সামির এর ব্যক্তিগত তথ্য খোঁজার কাজ চলমান। আপনার কাছে উনার সম্পর্কে তথ্য থাকলে, আমাদের দিয়ে সাহায্য করুন।

বিপ্লব শেখ

চাকরিজীবী- মিরপুর ১২ রূপনগর আবাসিক এর একটা ফ্যাক্টরিতে

মৃত্যু তারিখ : ১৯ জুলাই, ২০২৪

বয়স : ১৯ বছর

জন্ম তারিখ : ———-

জন্মস্থান : গ্রামঃ বুড়িগাংনি, ডাকঘরঃ পাক গাংনি-৯৩৮৫, গাংনী, মোল্লাহাট, বাগেরহাট।

যেভাবে শহীদ হয়েছেন :

মিরপুর ১০ আওয়ামীলীগ ছাত্রলীগ এবং পুলিশের নৃশংস হত্যাযজ্ঞে এ গুলিতে শহীদ হয়েছেন।

ব্যক্তিগত জীবন :

বিপ্লব শেখ এর ব্যক্তিগত তথ্য খোঁজার কাজ চলমান। আপনার কাছে উনার সম্পর্কে তথ্য থাকলে, আমাদের দিয়ে সাহায্য করুন।

আহসান হাবিব তামিম

শিক্ষার্থী- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

মৃত্যু তারিখ : ১৯ জুলাই, ২০২৪

বয়স : ২১ বছর

জন্ম তারিখ : ———-

জন্মস্থান : চাটখিল, নোয়াখালি।

যেভাবে শহীদ হয়েছেন :

মিরপুর-১০ গোলচক্করের কাছে পুলিশের গুলিতে আহত হলে, প্রথমে আল-হিলাল প্রা: হাসপাতালে নেয়া হয়।অবস্থার অবনতি হলে তাকে নেয়া হয় সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।সেখানেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে তামিম।

ব্যক্তিগত জীবন :

বাবা আন্দুল মান্নান,মা রাজিয়া সুলতানা।পরিবারের মেঝো সন্তান তামিম। বাবা এবং বড় ভাই দুজনেই কার মেকানিকের কাজ করেন।ছোট ভাইয়ের বয়স ৫ বছর।নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলে তামিম নিজ প্রচেষ্টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গনিত বিভাগে পড়ার সুযোগ পেয়ে বাবা মাকে আশার আলো দেখিয়েছিলো।তার মৃত্যুতে নিভে গেলো বাবা মায়ের সব আশার আলো।

শিক্ষার্থী,

স্থাপত্য বিভাগ, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি।

এই সম্পর্কিত আরও আর্টিকেল দেখুন

একটি উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সর্বাধিক পঠিত