Wednesday, March 19, 2025
হোমবই রিভিউলাভায় লালশাক পুবের আকাশ 

লাভায় লালশাক পুবের আকাশ 

কাব্যগ্রন্থটি লিখেছেন, সীমান্ত শরিফ।

লাল ও হলুদ রঙের প্রচ্ছদে আবৃত একটি কাব্যগ্রন্থ। নাম “লাভায় লালশাক পুবের আকাশ”। নামের বিশালতায় ও উৎসর্গের পংক্তিমালা দেখে বেশ আগ্রহ নিয়ে কয়েকটা কবিতা পাঠ করলাম। কাব্যগ্রন্থটা বেশ ইতিহাস মিশ্রিত মনে হলো। সম্পূর্ণ কাব্যগ্রন্থ বেশ কয়েক বার পাঠ করার পর ভাবলাম, ইতিহাস মিশ্রিত অতীতের আলাপ নিয়ে বিদ্রোহী ও বজ্র কালির ফোঁটামাখা কাব্যগ্রন্থটা রিভিউ করি। কাব্যগ্রন্থের ৩২ টি কবিতার মধ্যে বেশ কিছু কবিতা’র রিভিউ দেওয়ার চেষ্টা করছি। তার আগে পুরো কাব্যগ্রন্থের সারমর্ম তুলে ধরছি। 

সারমর্ম

 উদীয়মান তরুণ কবি সীমান্ত শরীফ তার বিশ্বাস ও দীক্ষা শিক্ষায়  মিশ্রিত এই কাব্যগ্রন্থটি তারই অনন্য প্রতিফলন বলে মনে হয়েছে। তিনি তার কাব্যগ্রন্থের কবিতামালায় আলাপ তুলেছেন, মুসলিমদের ঈমানের অংশ আল কুদস নিয়ে, বিবরণ দিয়েছেন নির্যাতনের, দ্রোহ তুলেছেন পাশ্চাত্য সভ্যতা ও ইয়াহুদীদের প্রতি। আলাপ তুলেছেন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে। এই বয়সে এসে কবির বেশ করে মনে পরলো ছাত্রাবাসের দিনগুলির কথা। একটি কবিতায় তিনি তুলে ধরেছেন – মৃত্যুর পরে তার মায়ের আবদার, বাবাকে নিয়ে আলাপ তুলেছেন অন্য একটি কবিতায়। তার কাব্যগ্রন্থে প্রেম প্রীতি ভালবাসাও স্থান পেয়েছে ভীষণভাবে। 

এবার গুটিকয়েক কবিতার রিভিউ দেওয়ার চেষ্টা করবো।  

আমায় ছিঁড়ে খাও হে শকুন

কবি তার এই কবিতায় তাকে হত্যা করার আকুতি জানিয়েছেন। কবিতার পংক্তিতে ফুটিয়ে তুলেছেন, মুদ্রাস্ফীতি দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতি ও রাষ্ট্রের নানান অসঙ্গতি নিয়ে। সম্রাজ্যবাদীদের  শকুনের সাথে তুল্য করে নামপর উন্নয়নের সমালোচনা করেন। তিনি বলেছেন – দোজখের ভয়ে তিনি আত্মহত্যা করতে চান না। তাই এই রাষ্ট্র নামক জাহান্নামে  তাকে হত্যা করা হোক। 

মায় মরণে ছবি আঁকে

এই কবিতায় কবি তার মায়ের সাথে সংলাপ করছেন, তার মা কবিকে প্রশ্ন করে যাচ্ছে, তিনি মৃত্যুবরণ করলে তার কবর কোথায় হবে? কে পড়বে তার জানা? বাড়ির দরজায় মসজিদে কি আর নামাজ পড়বে না মানুষ? নানান প্রশ্নের তালে তিনি আদেশও করে যাচ্ছেন। মৃত্যুর পরে যেন বেশি মানুষ জড়ো করা না হয়। নিকট আত্মীয়দের খবর দেওয়া হয়। মৃত্যুর পরে কবি যেন তার মায়ের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে সূরা পাঠ করে। 

অতঃপর কবি তার মায়ের এই সকল প্রশ্ন আর আদর্শের প্রেক্ষিতে বলেন। মায়েরা ও মৃত্যুবরণ করবে, তাদের আদেশ আমাদের কাছে প্রেসক্রিপশনের মতো। তবে কবির আকুতি, আলিপের মতো মা’র শরীরটা বাঁকা হয়ে গেলেও মা যেন আর ক’টা দিন বেঁচে থাকেন।  মাটির চুলায় রান্না করেন। মৃত্যু হলে যেন দু’জনের একসাথেই হয়। কবির এ কবিতায় মায়ের প্রতি নিদারুন ভালোবাসা ফুটে উঠেছে। 

আকসার কয়লা

বাইতুল মাকদিস আমাদের ঈমানের অংশ। নবীদের পরশে আবৃত হয়ে আছে কুদসের প্রতিটি কংক্রিট। কবি তার এই কবিতায়, গাজার বিমর্ষ চিত্র তুলে ধরেছে। তিনি বলেছেন – মায়েরা বাচ্চাদের পায়ে নাম লিখে রাখছে। যেন লাশ হওয়ার পরে চিনতে পারে । শিশুদের ছেঁড়াপাটা কলিজা আর রক্তাক্ত দেহ সহকারে কবরস্থ করার পর বিদ্রোহ করে কবি বলেন – খোদা ফেরেশতারা কি ভূমধ্য সাগরের চিনে না? কসম তেল আবিবের সেদিন বৃষ্টি হবে ছোপ ছোপ কলিজা গন্ধে কালো বৃষ্টি। একদিন আমাদের বিজয় হবে। সেই দিন শহীদের রক্তগুলো মেঘ হয়ে আরশে জড়ো হবে। কবি তার এই কবিতায় বাইতুল মাকদিসের মুক্তি প্রত্যাশা করেছেন। 

সার্বভৌমত্ব

ছোট্ট কয়েক লাইনের এই কবিতাটা খুব বেশি উপলব্ধির। তিনি তার মায়ের সাথে দেশের সার্বভৌমত্ব কে তুল্য করেছেন। তিনি যেমন সব সময় তার মায়ের আষ্টেপৃষ্ঠে লেগে থাকতে চান। তেমনি সব সময় মাতৃভূমির সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত হোক এটাই কামনা করেন। কবি’র এই কবিতায় নাগরিকদের অধিকারের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। 

বোডিং

কবি তার এই কবিতায় পড়াশুনার জন্য শৈশবে বাড়ি ছাড়ার স্মৃতি তুলে ধরেছেন। চৈত্র মাসে রোদের মধ্যে তার বাবা আসবাবপত্র মাথায় নিয়ে 

রওনা হয়েছেন ছাত্রাবাসের দিকে। এদিকে তার মা’ রওনা হওয়ার সময় নানান উপদেশ আর সাহস দিয়ে রওনা করিয়ে দিলেও তিনি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে ছিলেন। কবি পাঠশালায় হাজির হওয়ার পর পুরানা শিক্ষার্থীরা তাকে ভয় দেখাচ্ছিলেন। 

“অসুখ হলে ছুটি নাই। কাঁদলে নাম কাটা।”

গভীর রাতে কবি স্বপ্ন দেখলেন, তার মা তার জন্য কান্না করছে। কবি তার এই কবিতায় পড়াশোনার জন্য শৈশবে বাড়ি ছাড়ার স্মৃতি তুলে ধরেছেন। 

প্রেমোগ্রাফি

এই কবিতাটি পুরো কাব্যগ্রন্থের মধ্যে আমার কাছে অনন্য বলে মনে হয়েছে। কবি প্রেম বলতে এখানে বুঝিয়েছেন, শত লাবণ্যতায় হৃদয়ে চির ধরার প্রত্যাবর্তনের মতো। কবি তার অর্ধাঙ্গির শূন্য ডিসটেন্স কে প্রেম বলেছেন। তিনি মনে করেন প্রেমের কোন বিছানা হয় না। তিনি প্রেম বলতে বুঝেন একটি প্রতিরোধের আঙিনা। তিনি অবৈধ প্রেমকে সাহারা মরুভূমি ও পাপের প্রাসাদের সাথে তুল্য করেছেন। 

~ আমি কবিদের দর্পন মনে করি। তারা মানুষের আচার আচরণ চিন্তা চরিত্র কবিতার মাধ্যমে সমাজের কাছে তুলে ধরে। কবিদের কবিতা সমূহ যখন সময়ের কথা বলে, মাটি ও মানুষের অধিকারের কথা বলে। তাদের কবিতা সমূহের পংক্তি থেকে পংক্তিমালা তরুণ যুবকদের মস্তিষ্কে সৃষ্টি করে সচেতনতা ও অধিকার আদায়ের আন্দোলন। তবেই কবি মনে করি সে কবি কবিতা ও কাব্যগ্রন্থ সময়ের আলোকে প্রাসঙ্গিক। তেমনি শত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে ‘ লাভায় লালশাক পুবের আকাশ’ কাব্যগ্রন্থটি সময়ের কাব্যগ্রন্থ। যে গ্রন্থে সমাজ সংস্কৃতি দেশীয় ও বিশ্বরাজনীতির আলাপ তুলে প্রেম ও ভালোবাসা দিয়ে মানুষ কে মাখিয়ে দিয়েছেন।

~  আমি নিয়মিতই নানান ধরনের কাব্যগ্রন্থ পাঠ করি। যদিও বহুদিনের ইচ্ছে আবৃত্তি করার। তাল সুর কোন কিছুই আমার মিলে না তাই আবৃত্তি করা হয় না। তবে যে কাব্যগ্রন্থ গুলো খুব অনুভবের তা উপলব্ধি করি পর্যবেক্ষণ করি ভীষণভাবে। ঠিক তেমনি “লাভায় লালশাক পুবের আকাশ” কাব্যগ্রন্থটি আমার কাছে ভীষণ উপলব্ধির মনে হয়েছে। পুরো কাব্যগ্রন্থ বেশ কয়েকবার পাঠ করলেও এখন অবধি সব ছন্দের রং বুঝতে পারিনি। তবে কবি খুব কঠিন করে লিখেন নি। কিন্তু, কবিতামালা’র বেশ গভীরতা রয়েছে। তিনি তার এই কাব্যগ্রন্থে আলাপ তুলেছেন দেশ থেকে দেশান্তরে। তার কবিতাগুলো স্পর্শ করেছে সচেতন নাগরিকদের হৃদয়ে। আপনিও পাঠ করতে পারেন, বিদ্রোহী কন্ঠে আবৃত্তি করতে পারেন কবি সীমান্ত শরীফের ব্যতিক্রমী এই কাব্যগ্রন্থটি।

কাব্যগ্রন্থ – লাভায় লালশাক পুবের আকাশ। 

রিভিউয়ার- আসিফ মাহামুদ 

এই সম্পর্কিত আরও আর্টিকেল দেখুন

একটি উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সর্বাধিক পঠিত