প্রিয় পাঠক,
জুন মাস আসছে মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা নিয়ে, পাশাপাশি ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেটের আলোচনাও তুঙ্গে। পবিত্র ঈদ যেমন ত্যাগ ও মানবিকতার অনুশীলন, তেমনি বাজেট এক রাষ্ট্রের উন্নয়ন দিকনির্দেশনার প্রতিফলন। এই দুই উপলক্ষ আমাদের ব্যক্তিজীবন ও জাতীয় জীবনের দুটি ভিন্ন মাত্রায় ছাপ ফেলে-একটি আত্মার, আরেকটি রাষ্ট্রচিন্তার।
চলতি বাজেটে তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান, শিক্ষা, প্রযুক্তি ও উদ্যোক্তাসহায়ক বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি এসেছে। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়-বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা কতটা দৃঢ়? অতীতে আমরা বারবার দেখেছি, প্রতিশ্রুতির ফর্দ থাকলেও বাস্তবায়নের দুর্বলতা শিক্ষাব্যবস্থা, গবেষণা কিংবা চাকরির বাজারে উন্নয়ন ব্যাহত করেছে। ফলে, তরুণরা আশাবাদী হলেও ভরসা করতে পারছে না নিঃশর্তভাবে।
মে মাসে জাতীয় জীবনে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা আমাদের নতুন করে ভাবিয়েছে। গার্মেন্ট শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি ও সুযোগ-সুবিধা নিয়ে সৃষ্ট অসন্তোষ রূপ নেয় বিক্ষোভে, যা ঢাকাসহ বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। গেলো মে মাসে রাজনৈতিক অস্থিরতার যেমন দেখা দিয়েছে, তেমনি শিক্ষাঙ্গনেও ঘটেছে কয়েকটি উদ্বেগজনক ঘটনা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একযোগে আন্দোলনে নেমেছে দীর্ঘদিনের ক্যাম্পাস, গণপরিবহন সংকট, আবাসন সমস্যা এবং নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে। আর একই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে সাম্য হত্যাকাণ্ড-একজন শিক্ষার্থীকে নির্মমভাবে প্রাণ দিতে হলো, যার রেশ গোটা জাতির হৃদয়ে নাড়া দিয়েছে। এসব ঘটনা শুধু শোক নয়, আমাদের শিক্ষাঙ্গনের কাঠামো ও নেতৃত্ব ব্যবস্থার দীনতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।
সচিবালয়ে সরকারি কর্মচারীদের নজিরবিহীন আন্দোলন এবং পুরনো স্মৃতি ‘আয়নাঘর-এর আলোচনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়-রাষ্ট্রযন্ত্রের ভিতরেই জমে আছে বহুদিনের আওয়ামী দলদাস। এই সংখ্যায় আমরা দেখেছি আয়নাঘরের কথা, রাষ্ট্রযন্ত্র কিভাবে একসময় নাগরিকদের ভয় ও নিস্তব্ধতায় ঠেলে দিয়েছিল। সেই সময়ে নিখোঁজ, নির্যাতন ও নিস্তব্ধতার এক নিষ্ঠুর সংস্কৃতি ছিল, যার ভয়াল ছায়া আজও ইতিহাসের পাতায় জেগে আছে। ‘আয়নাঘর’ শুধু একটি নির্যাতনকেন্দ্র নয়, বরং একটি রাষ্ট্রীয় মানসিকতার প্রতীক-যেখানে ভিন্নমত মানেই অপরাধ। এসব অধ্যায় নতুন প্রজন্মকে স্মরণ করিয়ে দেয়, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জায়গায় আপস নয়, সাহসী উচ্চারণই হতে পারে সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ।
এই সব সংকট, প্রতিরোধ ও আশা নিয়ে আমরা এবারের “ক্যাম্পাস মিরর”-এ তুলে ধরেছি দেশের নানা প্রান্তের শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর-যেখানে আছে প্রতিবাদ, সৃষ্টিশীলতা, বঞ্চনা ও সাহসের কথা। ক্যাম্পাস মিরর বরাবরই তরুণদের চোখ দিয়ে সময়কে দেখতে চায়। ঈদের এই সময়ে আমাদের অঙ্গীকার-আমরা থাকব সত্যের পাশে, মানবিকতার পক্ষে, এবং নির্যাতনের বিরুদ্ধে সাহসী উচ্চারণ হয়ে।
