Wednesday, March 19, 2025
হোমপ্রচ্ছদ রচনাবিজয়ের অঙ্গিকার চব্বিশের দ্রোহে।

বিজয়ের অঙ্গিকার চব্বিশের দ্রোহে।

২০২৪ সালের ১৬ই ডিসেম্বর আমাদের বিজয়ের ৫৩ বছর পূর্ণ হবে। ১৯৭১ সালের এই দিনে, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম শেষে, ১৬ই ডিসেম্বর পৃথিবীর বুকে নতুন একটি দেশ জন্ম নেয়-বাংলাদেশ। এক নতুন সূর্য উকি দেয়, নতুন স্বপ্নের আহ্বান আসে। আজ, যখন আমরা অতীতের অর্জন এবং অপ্রাপ্তি নিয়ে ফিরে তাকাই, তখন আমাদের সামনে উন্মোচিত হয় অনেক প্রশ্ন। আমরা কতটা এগিয়েছি এবং কোথায় পৌঁছেছি? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে গিয়ে, আমাদের অনেক কিছু নতুন করে ভাবতে হবে। বিজয় দিবস বাঙালি জাতির শৌর্যবীর্যের এক অনন্য নিদর্শন। এটি কেবল একটি জাতির বীরত্বের ঘোষণা নয়, বরং বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের দিন।

২৪ এর জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ তার নিজস্ব ইতিহাসের এমন এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে, যেখানে পৃথিবীর ইতিহাসে ইতোপূর্বে ঘটে যাওয়া বহু তাৎপর্যপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপট, পরিণতি ও অর্জনের ঘটনাগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাই, যেকোনো ন্যায়ভিত্তিক যৌক্তিক রাজনৈতিক আন্দোলন সাফল্য অর্জন করেছে, কখনো ব্যর্থ হয়নি। এসব আন্দোলন-সংগ্রামের প্রকৃতি ও আদর্শগত অবস্থানের মধ্যে ভিন্নতা থাকলেও অবৈধ দখলদারী স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে এগুলো সর্বদাই বিজয়লাভ করেছে। বিশ্বের প্রাচীন ইতিহাসেও স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে বারবার বিদ্রোহ ঘোষিত হয়েছে। কোথাও বিদ্রোহ সফল হয়েছে, কোথাও আবার ব্যর্থ হয়েছে। সাফল্য ও ব্যর্থতার ধারাবাহিকতায় আমরা দেখেছি আধুনিককালে কোনো স্বৈরশাসকই গণ-অভ্যুথানের প্রবল প্রতিরোধের মুখে তার মসনদ রক্ষা করতে পারেনি।

১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশ বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান ও ভারত নামক দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হলেও পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা থেকে যায় শাসিত ও শোষিত। এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম শুরু হয় ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। ২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙালির আত্মত্যাগের সেই অধ্যায় আজও বিশ্বকে মুগ্ধ করে।

এরপর আসে ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, এবং ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের বিজয়। এই ধারাবাহিকতার চূড়ান্ত পরিণতি ছিল ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। এই ঘটনার পর বাঙালিরা সংগঠিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীর নেতৃত্বে বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করে মুক্তিবাহিনী গঠন করা হয়। ছাত্র-জনতা, পুলিশ, ইপিআর, আনসারসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ এই বাহিনীতে যোগ দেয়। মুক্তিবাহিনী গেরিলা যুদ্ধের কৌশলে পাক সেনাবাহিনীকে চরম বিপর্যস্ত করে তোলে। যুদ্ধের সময় বাঙালিরা শরণার্থী হিসেবে ভারতে আশ্রয় নেয়। সেখানে তারা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। দিনে দিনে মুক্তিবাহিনী শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। পাক বাহিনী উন্নত অস্ত্রশস্ত্র ও প্রশিক্ষণ নিয়েও বাঙালির সম্মুখযুদ্ধে টিকতে পারেনি।

অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করে। এটি কেবল একটি যুদ্ধের সমাপ্তি নয়, বরং একটি জাতির শৃঙ্খল মুক্তির জয়গান। বিজয় দিবসের তাৎপর‍্য কেবল অতীতের গৌরব নয়; এটি একটি জাতির অহংকার এবং ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা।

১৯৭১ সালের পর থেকে বাংলাদেশের অনেক ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে। ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে এটি খুব বেশি দীর্ঘ সময় না হলেও একটি জাতির উন্নয়ন-অগ্রগতির জন্য একেবারে কম নয়। স্বভাবতই প্রশ্ন আসে, যে লক্ষ্য ও আদর্শকে সামনে রেখে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, সেই লক্ষ্য ও আদর্শ কতটা অর্জিত হয়েছে? রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, স্বাধীনতার প্রধান আকাঙ্ক্ষা ছিল সব ধরনের অধীনতা থেকে মুক্তি এবং সমাজে গণতন্ত্র, ন্যায় ও সমতা প্রতিষ্ঠা। সব নাগরিকের মৌলিক চাহিদা ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে বাহাত্তরের সংবিধানে জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে মৌলিক নীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু আমরা সেখানে কি স্থির থাকতে পেরেছি? কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ আর্থসামাজিক সূচকে আমরা অনেক এগিয়ে গেলেও রাজনৈতিক আদর্শ অর্জন ও অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে আমরা কি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পেরেছি?

৫৩ বছরে আমাদের অর্থনৈতিক অর্জন বেশ মলিন। ২০১৫ সালে যখন আমরা নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছি, তখনও আমাদের সবগুলো দিকের উন্নতির সূচনা ঘটে। যদিও বর্তমানে মাথাপিছু আয় ১,৯০৯ ডলার, আমরা এখনো বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে কম উন্নত দেশগুলোর মধ্যে আছি। সমাজের প্রায় অর্ধেক মানুষ এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে এবং দেশের অধিকাংশ নাগরিক মৌলিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। দুর্নীতি, ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ, চিকিৎসা সেবা, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা-এই সমস্ত সমস্যা আমাদের উন্নতির পথে বাধা সৃষ্টি করছে।

আমদের স্বাধীনতা ও বিজয় সহজলভ্য হয়নি। আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে নানাবিধ ঘটনাপ্রবাহ ও চেতনাকে ধারণ করে। যেসব কারণে আমরা পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ি এবং সে অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য মুক্তিসংগ্রামে অবতীর্ণ হই-মূলত সেগুলোয় হচ্ছে স্বাধীনতা বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। কিন্তু আমাদের ক্ষয়িষ্ণু ও গন্তব্যহীন রাজনীতির কারণেই এতে বিচ্যুতি ঘটেছে। এখন শ্রেণি বিশেষের স্বার্থ রক্ষার অনুষঙ্গগুলোকে স্বাধীনতা বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে একাকার করে ফেলা হয়েছে। যা আমাদের মহান বিজয়ের অর্জনগুলোকে ম্লান করে দিচ্ছে।

এছাড়া, বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের অগ্রগতি অনেক কম। দারিদ্র্য, অশিক্ষা, এবং অপর‍্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা অনেক সময় আমাদের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দেয়। আমাদের দেশ এখনও উপযুক্ত পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন ছাড়াই এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশকে আরও অনেক দূর যেতে হবে, এবং এজন্য সমন্বিত ও সুসংহত উদ্যোগের প্রয়োজন।

যতদিন না আমরা সমাজের প্রতিটি স্তরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারব, ততদিন আমাদের অর্থনীতি এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম সঠিকভাবে চলবে না। প্রতিনিয়ত খবর আসে, কোটি কোটি টাকা পাচার হয়েছে দেশের বাইরে। দুর্নীতি সমাজের প্রতিটি স্তরে একটি স্থায়ী রূপ ধারণ করেছে। ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ কোটিরও বেশি, যা আমাদের অর্থনীতি এবং দেশের ভবিষ্যতকে ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে।

যদিও আমরা মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই, তবুও তাদের স্মৃতির সংরক্ষণে যথেষ্ট উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ত্রিশ লাখ শহীদের নাম তালিকাভুক্ত করা, তাদের স্মৃতি রক্ষায় জাদুঘর তৈরি করা, এবং তাদের জন্য ভাতা চালু করার দাবি এখন একান্ত জরুরি। এই শহীদরা নিজেদের জীবন দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা এনেছেন-তাদের অবদান কখনো ভুলে যাওয়া উচিত নয়।

আজ, আমরা যখন ৫৩ বছরের পথচলা মূল্যায়ন করি, তখন অবশ্যই মনে রাখতে হবে, আগামীর পথচলা আরও কঠিন হবে। আমাদের সামনে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ-বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা, জলবায়ু পরিবর্তন, সামাজিক অসাম্য, এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা। তবে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র উপায় হল, আমরা যদি একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করি, তবে আমাদের দেশ কখনও থেমে থাকবে না।

এখন সময় এসেছে, আমরা সবাই একযোগে কাজ করি। আমাদের সমাজে প্রতিটি নাগরিককে তাদের সম্পদে পরিণত করতে হবে। বিদেশে কর্মরত আমাদের শ্রমিকরা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। তাদের উন্নয়নে মনোযোগ দিলে, দেশ আরও সমৃদ্ধ হবে। ২০২৪ সালের জুলাই মাস এবং আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহজুড়ে ছাত্র-জন-তার অভূতপূর্ব ও অভূতশ্রুত গণ-আন্দোলন আমার পূর্বঘে-াষিত প্রত্যাশাকে বাস্তবে রূপদান করেছে। গণ-আন্দোলনেই যে হাসিনার স্বৈরতন্ত্রের ঐতিহাসিক পতন হবে এ বিষয়ে আমি পূর্বেই সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করি। একই সঙ্গে আমি এ কথাও গভীরভাবে বিশ্বাস করেছিলাম যে, উদীয়মান তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিকশিত নবজাগরণের বা রেনেসাঁর উন্মেষ থেকেই নবপর্যায়ের একটি গণ-আন্দোলনের সূচনা হবে।

বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা সংকটে রয়েছে। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচন এবং এর পরবর্তী অবস্থা আমাদের চিন্তার জন্য বড় কারণ। গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভ-অংশীদারিত এবং বিরোধী দলের অংশগ্রহণ-আজ প্রায় বিলুপ্ত। আমরা একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, মানবাধিক-ার এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

তবে, স্বাধীনতার ৫৩ বছরে, আমরা যদি নিজেদের ভুলগু-ি লকে সংশোধন না করি, তবে ভবিষ্যতে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। আমাদের নিজস্ব স্রষ্টি শক্তি-জনগণ-যদি তাদের শক্তি কাজে লাগায়, তবে এই দেশের কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন একদিন আসবেই। আমাদের অভ্যন্তরীণ ঐক্য, সুশাসন, এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। ২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশের সব দিগন্তে এক নতুন সূর্য উঠেছে, এসেছে এক আশ্চর্য্য নতুন প্রভাত উদ্ভাসিত এ সূর্যের প্রতিটি আলোকবিন্দুতে আমি দেখতে পাচ্ছি রেনেসাঁর দ্যুতি।

কেননা, একমাত্র রেনেসাঁ মুক্তির পথ দেখাতে পারে। সর্বকালে সব দেশে রেনেসাঁর মতো উন্মেষ নাও ঘটতে পারে। নিজের দেশের বাস্তবতায় সে দেশের জনগণ মুক্তির পথ খুঁজে নিবে। বাংলাদেশের জনগণ তাদের আর্থ-সাম-াজিক, রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক বিন্যাস ও পটভূমির আলোকেই আজ এক নতুন রেনেসাঁর জন্ম দিয়েছে। আমার বহু প্রত্যাশিত এ রেনেসাঁ ইউরোপের মতো নয়;চরিত্রগতভাবে এ রেনেসাঁ শুধু বুদ্ধিবৃত্তিক চেতনার ক্ষুরধার দিয়ে ইহলৌকিকতার জয়গান নয়, এ রেনেসাঁ জাতীয় মুক্তির চেতনায় আলোকিত একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রেনেসাঁ। এ নবউন্মেষ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধের এক সম্মিলিত অঙ্গীকার। এ নবজাগরণ একটি জাতিকে নব উদ্বোধনের চালিকাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আমার বহুলালিত এ রেনেসাঁ বাংলাদেশের সামগ্রিক জাতীয় চেতনা, আবেগ ও প্রত্যাশার এক উজ্জ্বল অগ্রদূত।

এ দেশের ছাত্রসমাজ এ রেনেসাঁর জন্ম দিয়েছে। তারা সম্পূর্ণরূপে বদলে দিয়েছেন রেনেসাঁর চিরাচরিত ধারণা। তারা ভাবমানসের অতীন্দ্রিয় কুহক থেকে রেনেসাঁকে সরিয়ে এনেছেন স্বৈরতন্ত্রের পতনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের মুক্তি। তারা মহামতি কাল মার্কসের সেই অমর বাক্যের মূর্তরূপ দিয়েছেন বাংলাদেশে। Philosophers have hitherto interpreted history, now the task is to change it. বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ মার্কসের গভীর প্রত্যাশাকে আজ পূর্ণ করেছে। তারা আবদ্ধ কক্ষের গ্রন্থঠাসা আলো-আঁধারিতে বসে বাংলাদেশকে তথ্য ও তত্ত্বের সারণী ও সিদ্ধান্ত নিয়ে মস্তিষ্ক উত্তপ্ত করেননি; তারা গণমানুষের মুক্তি ও স্বাধীনতার সংগ্রামে সেনানায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। মার্কস ‘পরিবর্তনের’ যে আশার কথা শুনতে চেয়েছিলেন, বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ সমগ্র দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে সেই আশা পূর্ণ করেছেন। ছাত্র-জনতা পরিণত হয়েছে সংগ্রামরত গণদার্শনিকে।

আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত, স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের সাথে সহযোগিতা করেছে, তবে কিছু ক্ষেত্রে বিরোধও রয়েছে। ফারাক্কা বাঁধ, তিস্তা পানি সমস্যা, বিএসএফ-এর কর্মকাণ্ড-এই সব বিষয়গুলোতে আমাদের একে অপরের পাশে দাঁড়ানো দরকার। ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ, তবে তাতে সমতা থাকতে হবে। আমাদের স্বার্থ রক্ষা করেই তাদের সহযোগিতা নিতে হবে।

আজকের এই দিন, যখন আমরা ৫৩ বছর পর নিজেদের অর্জন ও অপ্রাপ্তি মূল্যায়ন করি, তখন আমাদের সবাইকে একটি কথা মনে রাখতে হবে: একমাত্র ঐক্যবদ্ধ জাতি অর্থবহ হতে পারে। যেখানে আজকে আমাদের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের চোখরাঙানি, পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিবাদের চক্রান্ত হুক্কাহুয়ায় চারিদিকে শোরগোল। সেখানে আমরা হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতে পারিনা, আমাদেরকে কূটনৈতিক এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। আমাদেরকে নিজের ঐতিহ্য, স্বাধীনতা এবং জনগণের স্বার্থ রক্ষা করে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের স্থায়িত্বের জন্য একত্রে কাজ করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ একটি উন্নত, শান্তিপূর্ণ, এবং সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত হয়।

-লেখক 

সহকারী সম্পাদক, দ্যা ক্যাম্পাস মিরর 

শিক্ষার্থী, স্থাপত্য বিভাগ, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ।

এই সম্পর্কিত আরও আর্টিকেল দেখুন

একটি উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সর্বাধিক পঠিত