পতেঞ্জা নদীর ওপর দাঁড়িয়ে থাকা মুসমেসি সেতু যেন প্রকৃতি, নান্দনিকতা এবং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এক অসাধারণ সম্মিলন। এটি কেবল একটি সেতুই নয়, বরং এমন একটি শিল্পকর্ম যা স্থাপত্য ও প্রকৌশলের সীমাকে ছাড়িয়ে প্রকৃতির সঙ্গে গভীর সংযোগ তৈরি করেছে। ‘ভায়াডোত্তো ডেল’ইন্ডাস্ট্রিয়া’ (ইন্ডাস্ট্রি ভায়াডাক্ট) যা ‘বাসেন্টো নদীর উপর সেতু’ বা মুসমেসি ব্রিজ নামেও পরিচিত, এটি পতেঞ্জা , ব্যাসিলিকাটা এবং ইতালিকে সংযুক্ত করেছে।
এই সেতুর মাধ্যমে মুসমেসি স্থাপত্যের এক নতুন ধারার সূচনা করেন, যা পরিচিত হয় ‘প্যারামেট্রিজম’ নামে। প্রকৃতি থেকে অনুপ্রাণিত হলেও এই ধারার ডিজাইন সম্পূর্ণ মানুষের ব্যবহারের জন্য নির্মিত। যদিও এতে খরচ কিছুটা বেশি হয়, তবে যা তৈরি হয়, তা একদমই অন্যরকম। মুসমেসি সেতু তাই কেবল একটি স্থাপনা নয়, বরং প্রকৃতি ও মানুষের সৃজনশীলতার এক অনন্য মেলবন্ধন।
মুসমেসি সেতু পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর সেতুগুলোর একটি। ১৯৬৭ সালে এটি ডিজাইন করেছিলেন প্রতিভাবান ইঞ্জিনিয়ার সার্জিও মুসমেসি, এবং নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয় ১৯৭১ থেকে ১৯৭৬ সালের মধ্যে। চমৎকার এই সেতুটি দাঁড়িয়ে আছে দুইবার ভাঁজ হওয়া একটি প্যাঁচানো কংক্রিট কলামের ওপর, যার গভীরতা মাত্র ৩০ সেন্টিমিটার বা ১ ফুট। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে লোড ডিস্ট্রিবিউশন ও স্ট্রেস ডাইনামিকস শব্দ দুটি প্রায়ই ব্যবহৃত হয়। এই সেতুতে সেই লোড ডিস্ট্রিবিউশন দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে কলামের অনন্য আকৃতির মাধ্যমে।
মুসমেসি সেতুটি ডিজাইন করেছেন একটি ব্যতিক্রমী ভি-আকৃতির কলামের মাধ্যমে। এই ডিজাইনের পেছনে তিনি নদীর স্রোতের ধারণা কাজে লাগিয়েছিলেন এবং ভেবেছিলেন সেতুটি যেন পানির গতিপথের প্রতিফলন হয়। তার লক্ষ্য ছিল নদী ও রেলপথ উভয়কেই সমান গুরুত্ব দেওয়া, যা সেতুটিকে প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যেতে সাহায্য করেছে। এর ফলে, স্ট্রাকচারটি এমন এক স্বাভাবিক রূপ পেয়েছে যেন এটি সেই স্থানেই হাজার বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে।