Thursday, September 12, 2024
হোমপ্রবন্ধসাম্যবাদের বুলি ও বাস্তবতা

সাম্যবাদের বুলি ও বাস্তবতা

কেউ খাবে আর কেউ খাবে না, তা হবে না তা হবে না। সমাজতন্ত্রের ধ্বজাধারীরা সাধারণত এই স্লোগান দিয়ে থাকে। উক্তিটি নিঃসন্দেহে ভালো, এতে কোনো সন্দেহ নেই। বাংলাদেশের সংবিধানের ১০ নং অনুচ্ছেদেও সমাজতন্ত্রের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি এটিকে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবেও উল্লেখ করা হয়েছে। সমাজতন্ত্র, যাকে সাম্যবাদও বলা হয়ে থাকে। কিন্তু আমরা বাস্তবে কি দেখতে পাই? যারা এই মতাদর্শের ধারবাহক তাদের দেশে কি জনগণ এই অধিকার যথাযথ পায়? তারা কি আদৌ মানুষের মাঝে সমতা বিধান কায়েম করছে? এ মতাদর্শের গডফাদার ভলাদিমির লেনিনের দেশ সোভিয়েত ইউনিয়ন, সেখানে একসময় যে পরিমাণ ফল ও খাদ্যশস্য উৎপাদন হতো তা দিয়ে প্রায় পুরো এশিয়ার চাহিদা মেটানো সম্ভব ছিল, কিন্তু তারা এগুলো পচিয়ে নষ্ট করেছে তবুও অন্য রাষ্ট্রে সেগুলো সরবরাহ করেনি। এমনকি ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষে তারা কোনো খাদ্যের সরবরাহ করেনি। এই হচ্ছে তাদের সাম্যবাদ। শুধু তাই নয়, তারা তাদের এই কথিত সাম্যবাদের নামে যুগের পর যুগ দখলে রেখেছে এশিয়ার বহু রাষ্ট্র। ১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবের নামে তারা কাজাখস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কিমিনিস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান এর মতো স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহ দখলে নেয়। এই মতাদর্শে ধর্মীয় স্বাধীনতার কোনো স্থান নেই। এর প্রতিষ্ঠাতা খোদ কার্ল মার্ক্স ধর্মকে আফিমের সাথে তুলনা করেছেন। তার মতে ধর্মই সমস্ত শোষণ ও অত্যাচারের হাতিয়ার। অথচ এ মতাদর্শে পরিচালিত রাষ্ট্রগুলোই যুগের পর যুগ তাদের আয়ত্তে থাকা বিভিন্ন অঞ্চল দখলে রাখার মাধ্যমে অত্যাচার-নিপীড়ন চালিয়েই যাচ্ছে। চেচনিয়া, পূর্ব তুর্কিস্তান এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

এ আদর্শে উজ্জীবিত নেতৃবৃন্দ মুখে সাম্যের কথা বললেও তারা স্বভাবতই একনায়কতন্ত্র (Dictatorship) কায়েম করে আসছেন। মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশও এর ছিটেফোঁটার বাইরে নয়। সিরিয়ার ক্ষমতাসীন সরকার আসাদ পরিবার, ইরাকের বাথ পার্টি এর মধ্যে অন্যতম, যদিও তারা পুরোপুরি সমাজতন্ত্রের আদর্শে বিশ্বাসী নয়।

এ মতাদর্শের অনুসারীরা মানুষের সাম্যের কথা বলে থাকে। তাদের বিখ্যাত একটি স্লোগান হলো “দুনিয়ার মজদুর, এক হও হও”। কিন্তু তাদের এই সাম্যের পেছনে রয়েছে জুলুম-নিপীড়নের ভয়াল ধাবা, যা সোভিয়েত ইউনিয়ন ও গণচীন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই। তাদের এই মতবাদ পরিত্যাজ্য হওয়ায় তা একসময় নিজ গৃহেই আত্মহত্যা করে। যার ফলে সোভিয়েত ইউনিয়ন বিভক্ত হয়ে যায় ১৫ টি ভিন্ন রাষ্ট্রে। পরবর্তীতে পুঁজিবাদ নামক আরেক প্রান্তিক মতবাদ এর স্থান দখল করে যদিও এর কুফল বর্তমানে বিদ্যমান। এ যেন একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ এর ন্যায়। সমাজতন্ত্রে যেখানে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের তেমন সুযোগ ছিল না, পুঁজিবাদে ঠিক তার উল্টো (যেখানে ব্যক্তি মালিকানাই মুখ্য, অনিয়ন্ত্রিত বাজার, নেই রাষ্ট্র কর্তৃক বাধা-ধরা সুস্পষ্ট নিয়ম)। যার ফলে সমাজে ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বিরাজ করা দুষ্কর। বর্তমানে কিছু দেশ কাগজে-কলমে সমাজতান্ত্রিক হলেও পুঁজিবাদের অনেক দর্শন অনুসরণ করে থাকে।

বিংশ ও একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বের চরম প্রতিদ্বন্দ্বি দুই দেশ রাশিয়া ও আমেরিকার দ্বন্দ্বের অন্যতম কারণ এটি। সমাজতন্ত্রকে নির্মূল করতেই মূলত সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধে আমেরিকা আফগানিস্তানকে সহায়তা করে। এমনকি যেকোনো সময় এই দুই মতাদর্শের অনুসারী রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে যুদ্ধ লাগলে এক দেশ ওই আদর্শিক রাষ্ট্রকে সমর্থন করে থাকে। দু প্রান্তিক মেরুতে অবস্থিত এই সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদ মানবজাতির জন্য কখনো স্থায়ী সমাধান বয়ে আনতে পারেনি। তাদের এই দ্বন্দ্ব মূলত সমগ্র বিশ্বে যুদ্ধ ও অশান্তির ইতিহাস। অথচ আমরা আজ এর পিছনে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো ছুটছি। কবে হুশ ফিরবে আমাদের?আর চাপিয়ে দেওয়া বস্তপঁচা মাল কুড়াবো আমরা? এখনও কি সময় আসেনি জনতার কল্যাণের নতুন ইশতেহার গড়ার?

-লেখক
শাহরুক হোসেন তন্ময়

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
এই সম্পর্কিত আরও আর্টিকেল দেখুন

একটি উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সর্বাধিক পঠিত