Friday, September 13, 2024
হোমপ্রবন্ধস্টুডেন্ট লাইফে ইনকাম

স্টুডেন্ট লাইফে ইনকাম

“ছাত্রজীবন সুখের জীবন; যদি না থাকতো পরীক্ষা। ছাত্রজীবনে এটি একটি মুখরোচক বাক্য। পরীক্ষা শুধু লেখাপড়ায়ই নয়, আমরা সর্ব অবস্থায়ই পরীক্ষার সম্মুখীন হচ্ছি এবং পরীক্ষা দিচ্ছি। যেই পরীক্ষা মাতৃগর্ব থেকেই শুরু হয়। কারণ কেউ দশ মাসে ভূমিষ্ঠ হচ্ছে, কেউ আবার আরো কম সময়ে ভূমিষ্ঠ হচ্ছে। কোন বাচ্চ মেধাধী বেশি হচ্ছে, কোন বাচ্চা মেধা কম নিয়ে জন্ম লাভ করছে। কেউ ভালো ছাত্র হয়ে উঠছে, কেউ স্কুল কলেজের বারান্দায়ই যাচ্ছে না। আমরা সব সময় পরীক্ষার মধ্য দিয়েই যাচ্ছি। কেউ সেখানে সফল কেউ সেখানে বিফল।

কেউ পরীক্ষা দিচ্ছে জীবন যুদ্ধে, কেউ পরীক্ষা দিচ্ছে বাতিলের বিরুদ্ধে। আপনি পরীক্ষা না দিতে চাইলেও আপনাকে অসংখ্য পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে এবং হচ্ছেনও। আপনি পরীক্ষার হলে নকল করছেন, সেটা অন্যকে স্পাই দিবেন কি না, সেটাও পরীক্ষা। ইনকাম করতে গিয়ে অসৎ পথে না সৎ পথে ইনকাম করবেন, সেটাও একটা পরীক্ষা। কেউ সুদ, ঘোষ ও দুর্ণীতিতে জড়িয়ে পড়ছে, কেউ তা এড়িয়ে চলছে, এটাও পরীক্ষা। আর সব পরীক্ষার সেরা পরীক্ষা জীবন যুদ্ধের পরীক্ষা।

আর জীবন যুদ্ধের জন্য চাই ইনকাম বা টাকা। আমাদের ক্ষণস্থায়ী জীবনে ইনকাম না থাকলে জীবন চালানো কষ্টকরই নয়, মহা কষ্টের। কেউ ছাত্রজীবনে ইনকামের কথা চিন্তাই করতে পারে না। আবার কেউ কেউ ছাত্রজীবনেই তার ইনকামের ভিত গড়ে তলেছে। অপরদিকে অনেক ছাত্রছাত্রীরা ইনকামে জড়িয়ে পড়লে, ছাত্রজীবন নষ্ট করে ফেলছে। এটাও তার জন্য পরীক্ষা। ছাত্রজীবনে কোন কোন পন্থায় ইনকাম করা যায় দেখে নেয়া যাক:

  • টিউশনি করা।
  • অনলাইনে ব্যবসা বা সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যবসা করা।
  • কনটেন্ট তৈরী করা।
  • ফ্রিল্যান্সিং করা।
  • পার্ট টাইম জব করা।

ছাত্রজীবনে ইনকাম হতে লেখাপড়াবান্ধব। যেখানে সময় ব্যয় করলে আপনার সময়ও বিফলে যাবে না, অন্যদিকে ইনকামও আসবে। ছাত্রজীবনে ইনকামের সর্বোত্তম পথ হচ্ছে, টিউশনি। আপনি যে ক্লাসেই অধ্যয়ন করেন না কেন আপনার নিচের শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের আপনি টিউশনি করবেন। এছাড়াও কোন কোচিং সেন্টারের সাথে জড়িত থাকতে পারেন। তাতে আপনি শিক্ষার পরিবেশের মধ্যেই থাকবেন। আপনি যেসকল ক্লাস শেষ করে এসেছেন, এতে যা শিখেছেন, তার চেয়ে বেশি শিখবেন ঐ ক্লাসের ছাত্রদের টিউশনি করালে। গরীব, নিম্নবিত্ত ছাত্রছাত্রীরা তো বটেই, উচ্চবিত্ত ছেলেমেয়েদেরও টিউশনি করা উচিত। তাতে সে তার ক্যারিয়ার ও শিক্ষা জীবনে উন্নতি লাভ করবে। কারণ আপনি যেটা লেখাপড়া করে শিখেছেন, সেটা যখন অন্য কাউকে শিখাবেন, তা আপনার জন্যই বেশি উপকৃত হবে। সেখান থেকে ঐ ছাত্রের চেয়ে আপনি অধিক পরিমাণে শিখবেন। কারণ ভালো ছাত্র হলেই ভালো শিক্ষক হওয়া যায় না।

টিউশনি ছাড়াও ছাত্রজীবনের সেরা ইনকামের পথ হচ্ছে, কনটেন্ট লেখা। কনটেন্ট লেখার মাধ্যমে আপনায় মেধা আরো বিকশিত হবে। অনেক ছাত্রছাত্রী আছে, যারা কিন্তু কোন লেখাপড়ায় ভালো কিছু গুছিয়ে লিখতে পারে না। অনেকে চিঠি ও দরখাস্তও গোছিয়ে লিখতে পারে না। কনটেন্ট লেখার পরে তাতে অবশ্যই উন্নতি ঘটবে। ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে বাস্তব জীবনের সাথে পরিচিত হবেন এবং আপনার কমিউনিকেশন স্কিল বাড়বে। কমিউনিকেশন স্কিল ডেভেলপ করা মানে আপনার জীবনটাইকেই ডেভেলপ করা।

অনলাইন ব্যবসাও ছাত্রদের জন্য বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করতে পারে। অনেক ছাত্ররাই অবসর সময়ে ভিডিও দেখা, চেটিং করা, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আড্ডা দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করে না। তাতে করে তার ছাত্রজীবনের অতি মূল্যবান সময় নষ্ট করে। এ সময় যদি সে অনলাইন ব্যবসার সাথে জড়িত থেকে বিভিন্ন ধরণের পন্যের ছবি ও পন্য সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে অনলাইনে (বিভিন্ন প্লাটর্ফমে) পোস্ট করলে অর্ডার আসবেই। পন্যটি সুবিধামত সময়ে ডেলিভারী দিয়ে ইনকাম করতে পারে। তাতে তার অবসর সময় ও লেখাপড়ার মাঝের অবসর সময়ের যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারলো, তথাপি ইনকামও হলো। সে খরচের হাত থেকেও রক্ষা পাবে, কারণ অবসর সময়ে আড্ডা দিলে সেখানে খরচ হবেই। তাতে কর্মবান্ধব সুষ্ঠু ও সুন্দর সমাজ গড়ে উঠবে। কারণ যেখানে কাম আছে, সেখানে আকাম কম হয়। কথায় আছে না; অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। বসে বসে অলস সময় পাড় করলে শয়তান সেখানে নানাভাবে অসামাজিক কার্যলাপে প্রলুব্ধ করবেই।

পার্ট টাইম জব করাও ছাত্রজীবনে ইনকামের অন্যতম পথ। লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকে কিছুটা সময় সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করা যায়। সরকারী কাজ যেমন ভোটার তথ্য হালনাগাদ করা, আদমশুমারীর কাজ করা, বিভিন্ন গবেষণামূলক কাজের প্রাথমিক তথ্য কালেক্ট করা ইত্য্যাদি।

এছাড়াও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানেও কাজ কাজ করা যায়। দেশে অনেক দেশি-বিদেশী এনজিও প্রতিষ্ঠান আছে, যাদের কাজই হচ্ছে গবেষনা ও রির্পোট প্রদান বা প্রকাশ করা। আর গবেষনা করতে গেলে অবশ্যই ডাটা কালেক্ট করতে হয়, ডাটা এন্ট্রি করতে হয়। এসমস্ত কাজ ছাত্রছাত্রী অনায়াসে করতে পারে।

অনেকেউ বলতে পারেন যে, কিভাবে শুরু করবো? তোমাকে মনে রাখতে হবে যে, তোমার পথ তোমাকেই দেখতে হবে, তোমার পথ তোমাকেই তৈরী করতে হবে, কেউ শিখিয়ে-গিলিয়ে বলে দিবে না। তোমার যে কাজ করার মন মাসিকতা আছে এবং তা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ তা তোমাকে প্রকাশ করতে হবে, অন্যকে সেটা বুঝাতে হবে, এমনকি কোন বিনিময় ছাড়াও কাজ করতে ইচ্ছুক থাকতে হবে। যেখানে তুমি বিনিময় ছাড়া অবসর সময়টা কোন প্রতিষ্ঠানে দিবে, এক সময় তোমাকে বিনিময় দিয়েও রাখতে পারবে না। কারণ ততক্ষণে তোমার ডিমান্ড অনেকে বেড়েছে। এমন ক্যারিয়ার গঠন করতে হবে।

উপরোক্ত কাজগুলো ছাড়াও ট্যুরিস্ট গাইড, বিদেশী ভাষা শিখা ও শিখানো, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান (আইটি, সিভিল, আইন ইত্যাদি) এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা, একুশে বই মেলায় পার্ট টাইম জব করা যেতে পারে। কর্মবান্ধব সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে সমাজ তথা দেশ উন্নত হতে বাধ্য।

লেখক,

-শাহজাহান আলী মূসা

এই সম্পর্কিত আরও আর্টিকেল দেখুন

একটি উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সর্বাধিক পঠিত